ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০ গুন দামে লবণ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
২০ গুন দামে লবণ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা!

ঢাকা: ভারত থেকে ক্রুড (অপরিশোধিত) লবণ কিনে এনে তা ১৫ গুন বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পরিশোধিত আকারে যা ২০ গুনেরও বেশি।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে এসেছে। বড় কয়েকটি কোম্পানির সিন্ডিকেট লবণ খাত থেকে কয়েক দিনেই কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
 
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের লবণচাষিদের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী ক্রুড লবণের দর নির্ধারণ করেছিলেন ১০ টাকা কেজি। মৌসুমের শুরুতেই বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে চাষিদের কাছ থেকে সব লবণ কিনে গুদামজাত করে ফেলেন। গত ছয় মাসে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত লবণের মূল্য ২০ টাকা থেকে ৪২ টাকা এবং খোলা লবণ ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে ভারতে ক্রুড লবণের দর ছিল কেজিপ্রতি ২ টাকারও কম।  

লবণচাষিদের কাছে কোনো লবণ না থাকায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত আগস্ট মাসে প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
 
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) তালিকা অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণকল মালিকদের ভারত থেকে লবণ আমদানির এ অনুমতি দেয়। তবে বেশিরভাগ লবণকল মালিকই নিজেরা লবণ আমদানি না করে বড় আমদানিকারকদের কাছে অনুমতিপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ব্রান্ডের প্যাকেট লবণ বিক্রিকারী ওই বড় আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমদানিপত্র কিনে নেওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী লবণের বাজারে সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাবই পড়েনি। বরং বাড়ছে লবণের মূল্য।
 
এ অবস্থায় কোরবানির পশুর চামড়ায় ব্যবহার্য ক্রুড লবণের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ছাড়িয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন ট্যানারি মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে চামড়া খাত হঠাৎ করেই পড়েছে নতুন সংকটে।  

সংকট নিরসনে গত সপ্তাহে নতুন করে আরো এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মোট আড়াই লাখ টন ক্রুড লবণ আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিসিকের দেওয়া তালিকা অনুসারে ছোট লবণকলগুলোকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কাছে অনুমতিপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়নি’।
 
তিনি বলেন, এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) নতুন করে আরো এক লাখ টন ক্রুড লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারত থেকে প্রতি কেজি দুই টাকার কম মূল্যে লবণ কিনে ব্যবসায়ীরা তা কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ব্যবসায়ীদের ডেকে এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেছি। ফলে ব্যবসায়ীরা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে ২০ টাকা কেজি দরে লবণ বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন। অন্যদিকে প্যাকেটজাত লবণের দাম প্রতি কেজিতে চার টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ঈদের পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করবো’।
 
সিনিয়র এ সচিব বলেন, ব্যবসায়ীরা লবণের দাম না কমালে লবণ শিল্পের জন্যই তা কাল হবে। কাউকে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। যেহেতু ভারতে লবণের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম, তাই প্রয়োজনে লবণ আমদানির জন্য সীমান্ত ওপেন করে দেওয়া হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬ 
আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।