ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ইনক্রিমেন্ট’ ইস্যুতে শ্রমিক অসন্তোষ

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৬
‘ইনক্রিমেন্ট’ ইস্যুতে শ্রমিক অসন্তোষ শ্রমিক আন্দোলনের ফাইল ফটো

ঢাকা: ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেই সময়ে ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর বেসিক মজুরির ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) দিতে মালিকপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকরা যথার্থভাবে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজধানীর ইনডিগো গার্মেন্টেস এর শ্রমিকরা জানান, ৫ শতাংশ হারে কখনোই মজুরি বাড়ানো হয়নি তাদের। মালিকরা ইচ্ছে মতো মজুরি বৃদ্ধি করছে।  

তারা বলেন, প্রতিবছর যদি ৫ শতাংশ করে ইনক্রিমেন্ট পেতাম তাহলে আমাদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ভাবতে হতো না।

একই অভিযোগ করেন ডিসেন্ট গার্মেন্টস এর শ্রমিকরা।  

তারা জানান, মালিকরা ইনক্রিমেন্টের ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করেছেন। এক্ষেত্রে মালিকদের কাছের লোকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। বাকিদের যা আছে তাই থাকে।  

ইনডিগো ও ডিসেন্টের মতো ২০ শতাংশ শিল্প কারখানাতে ইনক্রিমেন্ট নিয়ম অনুযায়ী করা হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

সিরাজুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, বড় আর কমপ্লায়ান্স ফ্যাক্টরি নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দিলেও মাঝারি ও ছোট আকারের কারখানাগুলো শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী। কেউ বা আবার ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছেই না। ফলে শ্রমিকদের বেতন যে হারে বাড়ার কথা ছিলো সেই হারে বাড়ছে না।  
 
ইনক্রিমেন্ট সঠিক নিয়মে না করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধও বলে মনে করছেন তিনি।

অন্যদিকে যেসব শ্রমিক নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন তাদের মালিকপক্ষ ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত করছেন বলে জানিয়েছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।

তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি শ্রমিকরা তাদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। কিন্তু তাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যে শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার নিয়ে সরব তাদের বছর শেষে ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।  

‘যেহেতু ইনক্রিমেন্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক, শ্রমিকরা ইচ্ছে করলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে পারেন। কিন্তু শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় মালিকপক্ষের সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেরে উঠেন না। ’ যোগ করেন তিনি।

বিকেএমইএ’র (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) দ্বিতীয় সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় সব কারখানাতেই নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছোট দু’একটি কারখানায় এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। কিন্তু এটা বড় কোনো বিষয় নয়। এ ধরনের কারখানার শ্রমিকরা আমাদের কাছে এলে আমরা সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।  
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের শুরু থেকেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। সেই আন্দোলনের ফলে গঠিত হয় মজুরি বোর্ড। মালিক, শ্রমিকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মজুরি বোর্ডের ১০ম সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হয়। এ সময় আরও বলা হয়, ন্যূনতম মজুরির বেসিক ৩ হাজার টাকা ধরে সেই হিসেবে এর ৫ শতাংশ হারে প্রতিবছর শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।

বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
ইউএম/আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।