ট্যাক্সের আদায়ের ওপর নির্ভর করে আগামী বছর সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
মঙ্গলবার (০৯ মে) বিকেলে সচিবালয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার জন্য মেয়রদের মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মোশাররফ হোসেন একথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি জনসম্মুখে সবার সামনে বললাম, সন্তোষজনক ট্যাক্স যদি আপনারা আদায় না করতে পারেন, আগামী বছর সরকারের যে অনুদান যাওয়ার কথা, সেটা কিন্তু আপনারা পাবেন না। আপনারা ট্যাক্স আদায়ের দিকে নজর দেন, আদায় করেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা এবার থেকে একটা জিনিস বিবেচনা করব, সরকারের থেকে আপনাদের যে অনুদান, যে অ্যালটমেন্ট যায়, অ্যালটমেন্ট যখন আমরা দিব, আপনাদের বকেয়া আদায়, ট্যাক্সের আদায় কত পার্সেন্ট করছেন- এইটা দেকা হবে কিন্তু…।
এলাকার উন্নয়নে বেশি বরাদ্দ চেয়ে বক্তব্য শুরু করেছিলেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
তার কথার সূত্র ধরে মন্ত্রী বলেন, আপনারা তো সেলফ গর্ভমেন্ট, আপনাদের সেলফ ফাইন্যান্সিং হবে। সরকার ইমার্জেন্সি দরকার পড়লে সহায়তা করবে। যে সব বেসিক সার্ভিস আপনারা দিবেন, ওয়াটার সাপ্লাই, ইলেক্ট্রিসিটি, রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা এটা আপনারা যদি করতে পারেন, ট্যাক্স দিয়ে এটা করার কথা।
‘স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রচেষ্টা আপনাদের করতে হবে। কিছু্ করব না, প্রয়োজন হলেই সরকারের কাছে একটা চিঠি লিখে দেব পাঁচ কোটি টাকা দিয়েন। বিষয়টা কিন্তু চিঠির না। বুঝাইতে পেরেছি আপনাদের কথাটা, বুঝতেছেন?’
এসময় মেয়ররাও মন্ত্রীর সঙ্গে সম্মতি জানান।
মন্ত্রী বলেন, পারফরমেন্স বেইজে হবে অ্যালটমেন্ট। নেক্সট ইয়ারের বাজেটে যখনই অ্যালোকেশন লিখব, আগে আমরা জিজ্ঞাস করব আপনাদের বাজেটে কত ভাগ আদায় করা হলো। কারণ আদায় করাটা অপ্রীতিকর কাজ। ভোটে দায়ড়াবো, নগদ আদায় করতে যেয়ে ভোট পাব না, আর এটা সরকারে ওপর থেকে যাবে?
মন্ত্রী বলেন, অপ্রীতিকর কাজ সরকার করে দেবে না। ট্যাক্স আদায় করতে গেলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতে কেনইবা পড়বেন?
পৌর কর্মচারীদের আন্দোলন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, তারা এখন রাস্তায় আন্দোলন করতে নামতেছে, তাদের সরকার থেকে বেতন দিতে হবে। তার মানে, আগামী দুই মাসের মধ্যে সব ক’জন মেয়রদের আমাদের বিদায় করতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে। কারণ এটাতে সবই সরকারি একটা সংগঠন হয়ে যাবে।
মেয়রদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা কী চান এ সংগঠন সরকারি হয়ে যাক? এসময় কয়েকজন না, না বলে ওঠেন।
পৌর মেয়রদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কোনো মন্ত্রণালয়েরই ট্যাক্স আদায় করার ক্ষমতা নেই। একমাত্র সংগঠন আপনারা যারা সরাসরি ট্যাক্স আদায় করতে পারেন এবং সেই ট্যাক্সের টাকায় বাজেট করতে পারেন। খরচ করতে পারেন। একটা সরকার যা করতে পারে, আপনারা তাই করতে পারেন।
মন্ত্রী বলেন, আপনাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি নিজেদেরও সম্মানী সব দ্বিগুন হয়ে গেছে। সব দ্বিগুন হলে আপনার ট্যাক্স কেন দ্বিগুণ হবে না? সেটার দিকে নজর দিতে হবে।
এক মেয়র বলে উঠেন, স্যার আমরা তো গরিব। তাকে থামিয়ে মন্ত্রী বলেন, গরিব তো আপনার কাছে শিখতে হবে না। আমরা তো জানি। আপনি একলা তো বাংলাদেশের বাসিন্দা না, আমরাও। গরিব বলেই তো বেতন ডাবল করতে পারছি। আপনি কেন ইনকাম ডবল করতে পারবেন না? একথা বলে কোনো লাভ হবে না। ইনকাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন, নিজের সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
মন্ত্রী হিসেবে বলছি, গর্ভমেন্ট সব প্রয়োজন মেটাতে পারবে না, সম্ভব না। আমাদের কাছে সে টাকা নাই। বাড়তি ব্যয়ের জন্য ইনকাম বাড়াতে হবে। এজন্য যা যা করণীয় করেন, তা তা সহায়তা দিব।
এসময় সরকারের পতিত জমি ব্যবহারের দাবি জানান এক মেয়র।
অনুষ্ঠানে বেলারুশ থেকে কেনা ১৪৩টি ভারী যানবাহন ও যন্ত্রপাতি তিনটি সিটি করপোরেশন ও ১১টি পৌরসভার মেয়রদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়ররা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ