দফায় দফায় বেড়ে চলেছে জমি অধিগ্রহণ ব্যয়। ২০১৯ সালে স্বল্প পরিসরে বন্দর চালু করার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে জমি অধিগ্রহণকেই দেখছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভিত্তি বছর নির্ধারণের লক্ষ্যে জমির দলিল মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জমির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে এসব জমির দাম সোনাতুল্য হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
২০১৫ সালের সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় মৌজা এলাকায় জমির দাম বেড়েই চলেছে। সর্বনিম্ন কাউয়ার চরে দশমিক ৪ শতাংশ এবং মধুপাড়ায় ৪৪৩ শতাংশ সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে। প্রকল্প এলাকার নিশানবাড়িয়ায় ১৭৭, দেবপুরে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত জমির দাম বেড়েছে।
এই মৌজাগুলোর পাশেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যে কারণে বানাতিপাড়ায় ১৩৪, নয়াকোটে ৩১৫ ও চান্দুপাড়ায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। নির্ধারিত মূল্য থেকে জমি অধিগ্রহণে বিশাল তারতম্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গড়ে জমির দাম নির্ধারণ করা হলে কেউ লাভবান হবেন, আবার কেউ হবেন ক্ষতিগ্রস্ত।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মানুষই চাইবে না বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়তে। এতে জমির দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারপরও বলবো প্রকল্প এলাকার মানুষের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে জমির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে। এই প্রস্তাব আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম পুনর্বাসন। সরকার স্থানীয়দের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির জন্য ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ১৯ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু গত জুন মাস পর্যন্ত এক একর জমিও অধিগ্রহণ করা যায়নি। বেধে দেওয়া দামে প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের স্বপ্নের প্রকল্প পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ। পায়রা বন্দর বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে এখানকার চিত্র। ভবিষ্যতে জমির দামও কয়েকগুণ বাড়বে। যে কারণে স্থানীয়রা জমি ছাড়তে চাচ্ছেন না। এখনই জমির দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা।
জমি অধিগ্রহণ ছাড়াও প্রকল্পের কাজে বেশকিছু সংশোধন করা হচ্ছে। পায়রা বন্দরে ন্যূনতম অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সীমিত আকারে বন্দরের কার্যক্রম চালু এবং একটি ফুল ব্লউন ডিপ সি-পোর্ট (Full blown deep seaport) গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে পায়ারা বন্দরের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণও করা হবে।
গভীর সমুদ্র বন্দরের আউটবার ও নদীপথে চিহ্নিত বারগুলোর প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে মালামাল ও কন্টেইনার পরিবহন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুনভাবে প্রকল্পে সংশোধন আনা হচ্ছে। প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যেই এই সুবিধা চালু করা হবে। বাড়তি ব্যয়ের বিশাল অংকের টাকা খরচ হবে জমি অধিগ্রহণে।
১৬ একর জমিতে পাঁচতলা প্রশাসনিক ভবনসহ স্বল্প পরিসরে অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। পাশাপাশি ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, পাইলট ভেসেল ক্রয়সহ এলাকা জুড়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পোর্ট রেডিও কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন, এক হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। তবে সংযোগ নদীর মার্কিং ও ড্রেজিংয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি পায়রা বন্দরের সামনের সঙ্গে সংযোগ সড়কের অবস্থাও বেহাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
এমআইএস/আরআর/এসএইচ