নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলো ৫ বছর ও তার বেশি সময় ধরে অনাদায়ী থাকা খেলাপী ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে ওই ঋণ অবলোপন করে থাকে। ওই ঋণের হিসাব ব্যাংকের মূল ব্যালান্স শিট থেকে আলাদা ভাবে হিসাব করা হয়।
এসব ঋণ আদায়ের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা ইউনিট রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ে মামলা করলে অনেক সময় ঋণের চেয়ে আদায় খরচ বেশি হয়। এজন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে মামলা না করে অবলোপনের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী থাকায় পাঁচ বছরে ব্যাংকটি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনকৃত টাকার পরিমান ৫ হাজার ৫শ ৮২ কোটি ৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ব্যাংক অব বাহাওয়ালপুরকে অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় সোনালী ব্যাংক।
২০০৭ সালের ৩ জুন ব্যাংকটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। যেসব জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শাখা নেই সেসব জায়তায় সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের সরকারি কোষাগারের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
এছাড়াও ব্যাংকটি স্ট্যাম্প শুল্ক, খাজনা এবং নিবন্ধীকরণ ফি আদায়, সঞ্চয়ী হিসাব পরিচালনা, সরকারি কর্মচারীদের পেনসন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে থাকে।
সোনালী ব্যাংক থেকে জানা গেছে, পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে অবলোপন করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বছরটিতে অবলোপনের পরিমান ২ হাজার ৮শ ৩ কোটি টাকা। পরের অবস্থানে ২০১৩ সালে অবলোপনের পরিমান ২ হাজার ৩শ ১৯ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে ২০১২ সালে ৪শ ২২ কোটি ৯৪ লাখ, ২০১৫ সালে ৩৪ কোটি ৯১ লাখ এবং ২০১৬ সালে অবলোপন করা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
২০১৪ সালে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাজধানীর হোটেল শেরাটন শাখা থেকেই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে অবলোপন করা হয়েছে ১ হাজার ২শ ২৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ম্যাক্স স্পিনিং মিলস’র ৫শ ২৫ কোটি টাকা। আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের ৪শ ৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বাকি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলমার্ক নীট কম্পোজিট, হলমার্ক স্টাইল, হলমার্ক ডেনিম, হলমার্ক নিটিং অ্যান্ড ডাইং, হলমার্ক প্যাকেজিং, ববি ডেনিম কম্পোজিট, ববি ফ্যাশন লিমিটেডের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণে বাধ্য হয়ে অবলোপন করায় প্রতি বছর এর পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
অনাদায়ী থাকা মন্দ বা ক্ষতিজনক পর্যায়ের খেলাপি ঋণ এক পর্যায়ে ব্যাংকের স্থিতিপত্র (ব্যালান্স শিট) থেকে বাদ দেওয়া হলেই তা অবলোপনের মধ্যে চলে যায়। ঋণ অবলোপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৩ সালে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, এসব ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা আগের ডিসেম্বর’১৬ প্রান্তিকের চেয়ে ৪ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বেশি।
২০১৭ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বর ২০১৬ শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা।
এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে আরও ঋণ অবলোপন করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য এখনই ব্যাংকের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এসই/বিএস