সংস্থাটি বলছে, গত কয়েক বছর ধরে বাজেটে আবাসন, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স এবং অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সুবিধা দেয়া হয়েছে। এটা নৈতিকতা বিরোধী।
শুক্রবার (০২ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ এর পর্যালোচনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংস্থাটির সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে সরকারের যে প্রত্যাশা রয়েছে, তার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু যে অবকাঠামো এবং অনুমানের ভিক্তিতে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে বাজেট বাস্তাবায়ন সম্ভব হবে না। তার কারণ জাতীয় এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে জনপ্রশাসন দিয়ে। এখাতে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান কর নীতি ও ভ্যাট আইনের কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ভোট যেভাবে বাড়ানো হয়েছে,এতে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে দেশে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি।
তিনি বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি যে বাজেটের আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। কারণ বাজেটের সঙ্গে প্রায়ই এমন সব প্রাক্কলন করা হয় যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। এবারও আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, মোট সরকারি ব্যয় ২৬ শতাংশ বাড়বে। অর্থাৎ সরকারের ব্যয় চারভাগের এক ভাগ বেড়ে যাবে আগামী এক বছরে। অথচ গত চার-পাঁচ বছরের হিসাব নিলে দেখা যাবে এ খাতে ১৪-১৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এই বৃদ্ধির বাস্তবায়ন পরিকল্পনাও বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে দেখতে পারিনি। বড় ধরনের খরচের প্রাক্কলন করলেন, কিন্তু বিষয়টি হল সেটি বাস্তবসম্মত, সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থার সঙ্গে করতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এবার বাজেট একটি মাজারের মত। এতে ভ্রম রয়েছে। এতে বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। কেননা, রাজস্বআয়-ব্যয়ের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। কাজেই এ বাজেটে পরাবাস্তব বাজেট কাঠামো দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে রাজস্ব বাড়বে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ, গতবার যা ছিল ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ এবার দ্বিগুণ হচ্ছে, এটা কতটা সম্ভব?
বাজেটে সহজ কর আদায়যোগ্য সেবার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যেমন ব্যাংক, বিমান ইত্যাদি। কিন্তু এসব খাতে করতো আদায় হচ্ছে। কাজেই যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর বোঝা না বাড়িয়ে যারা কর দেয়না, তাদের করের আওতাভূক্ত করা উচিত ছিল।
এছাড়া বাজেটে শিক্ষাখাতের চেয়ে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত হচ্ছে না। বড় প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ছে। আর মেয়াদ বাড়া মানেই ব্যয় বাড়বে। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে বাজেটে। তবে এজন্য জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু যে অর্থায়ন বাজেটে বলা হয়েছে, যে আর্থিক কাঠামো দেওয়া হয়েছে, তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বাজেটে রাজনীতি-অর্থনীতিকে আনা হয়নি। যেমন- পুঁজিবাজার, ব্যাংকখাত এসব রাজনীতি-অর্থনীতির আওতায় পড়ে। কিন্তু ওইখাতে পুঁজিপতিদের স্বার্থহানির দিকে যাননি অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনকে দ্রুত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য কাঠামো প্রণয়ন দ্রুত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ