বাজেট নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া দিলেন দিনমজুর গোলাম মোস্তফা। বাড়ি নেত্রকোণার ধোবাউড়ায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার ১১তম বাজেট দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। ইতিমধ্যেই কিছুকিছু পণ্যের ওপর বাজেটের প্রভাব পড়েছে। বাজেট কার্যকর হতে আরো সময় থাকলেও প্রতিবছর অসাধু কিছু ব্যবসায়ী তাদের পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। যার প্রভাব পড়ে সরাসরি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। এবারও তাই হচ্ছে। বাজারে ইতিমধ্যে প্যাকেটজাত দ্রব্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে বিড়ি-সিগারেটের দাম।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, দিনে ৪শ’ টাকা আবার কোনোদিন ৫শ টাকা ইনকাম হয়। ঘর ভাড়া, গ্যাস-পানির বিল দিয়ে সব মিলিয়ে কয় টাকা থাকে। তিন ছেলে-মেয়ে আর বউ নিয়ে পাঁচজনের সংসারে এ আয় দিয়ে কোনো রকম টিকে থাকতে হয়।
বাজেট নিয়ম করেই প্রতি বছর হয়। কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি কেন? এ প্রশ্নের উত্তরও খোঁজেন তিনি। বলেন, 'সব সরকারই কেবল বড়লোহের কতা ভাবে। '
গোলাম মোস্তফার মতো একই রকম প্রতিক্রিয়া রমজান আলীরও। তিনি বিভিন্ন দোকানে মাল টানার কাজ করেন। ঢাকার মিরপুরে থাকেন পাঁচ বছর হলো। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন। কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই, বলে জীবনের ক্ষোভ তার অনেক। বলেন, গরীব ঘরে জন্মেই যত পাপ হয়েছে। নইলে সতভাবে জীবন যাপন করেও কেন অভাব কাটে না। সরকারের বাজেটে কেন গরীবের স্বার্থ থাকে না।
'এই যে ঘাম ঝরতাছে, দ্যাহেন কতো কষ্ট। জিনিসের দাম তো বাড়বই। বিরিও খাইতে পারুম না। দ্যাশে বিরি-সিগারেট বেচা-কেনা-বানানো বন্দ করে দিলেই তো অয়'।
রমজান আলীর আয় দিন বিশেষে ৪শ থেকে ৬শ টাকা। গ্রামের বাড়ি বরিশালে বউ ছেলে-রেখে ঢাকায় থাকেন। মাসে তার নিজেরই খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বাড়িতে বুড়ো বাবা-মাও আছেন। সবমিলিয়ে যে আয় তা দিয়ে সংসার তার কষ্টেই টিকে আছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফল বিক্রি করেন আব্দুর রহিম। ছবি তুলতে গেলে কিছুটা আপত্তি জানিয়ে বললেন-কি মামা ভিড়িও কইরা ফেসবুকে ছাইড়া দিবেন নাকি? তা করা হবে না এমন কিছু বলে আশ্বস্ত করার পর বললেন, দ্যান মামা ছাইড়া দ্যান। ভিআইপিদের যদি একবার রিশকায় নিয়া গুরতে পারতাম, তওলেই তো কাম অইতো। এই বাজেট টাজেট দিয়া আমাগো লাভ নাই। আর কষ্ট বাড়ে।
এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় শাক-সবজি, চাল, ডাল, মাছ, মাংসের মতো দ্রব্য ছাড়া সব পণ্যের ওপরেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় ও উচ্চহারে কর আদায়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কথা বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি আরো বলেন, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আর এরফলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বেন নিন্ম মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৭
ইইউডি/বিএস