হাটে-মাঠে, পাড়ার অলিগলিতে, পথে-প্রান্তরে, বাগানে-বাগানে শুধুই আম। কাঁচা-পাকা আমে সড়ক ও মোহনাগুলো এখন ছেয়ে গেছে।
রাজশাহীর বাতাসে তাই এখন ভেসে বেরাচ্ছে আমের ম ম গন্ধ। তবে ঝড়-ঝঞ্ঝা, শিলাবৃষ্টি আর তাপদাহে এবার কিছুটা ছোট হয়েছে রাজশাহীর আমের আকার। কমেছে ফলনও। কিন্তু গাছ থেকে আম ভাঙার পর পরই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ঝুড়ি-ঝুড়ি আম। তাই কম ফলনেও হাসি ফুটেছে আমচাষিদের মুখে।
কেবল হাট-বাজার নয়, আমকেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। রাজশাহী অঞ্চলের দু’টি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমী কর্মসংস্থানও হয়েছে। এদিকে, হাট-বাজার থেকে জাত আম গোপালভোগ ও মোহনভোগ এরইমধ্যে বিদায় নিতে শুরু করেছে। তবে তাদের জায়গা নিতে প্রস্তুত ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, লখনা, রাণীপছন্দ, আম্রপালি, রাণীপ্রসাদসহ নানা বাহারি নাম আর স্বাদের আম। আমের বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এ জনপদে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে এখন মুখরিত থাকছে রাত-দিন। এছাড়াও মহানগরীর সাহেব বাজার, শালবাগান বাজার, শিরোইল বাস টার্মিনাল, বিন্দুর মোড়, বাঘা-চারঘাটসহ প্রতিটি উপজেলার বাজারে জমে উঠেছে আম ব্যবসা। রাজশাহীর কৃষিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধারণা এবার রাজশাহীতে অন্তত সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজার ও হাইয়ের পাশে সড়কে অন্তত ৬০টি আমের আড়ৎ রয়েছে। বর্তমানে সবগুলো আড়তেই আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঝুড়িই আমে ঠাসা।
স্থানীয় আড়ৎদার জুলফিকার আলী মণ্ডল বলেন, বাজারে বর্তমানে জাত আম গোপালভোগ যাই যাই বলছে। গাছের অবশিষ্ট আমগুলোও চলতি সপ্তাহেই নামিয়ে ফেলা হবে। তাই আগামী সপ্তাহ থেকে আর রাজশাহীর বাজারে গোপালভোগ ও মোহনভোগ আম পাওয়া যাবেনা। যেগুলো পাওয়া যাবে সেগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জের কানসাটের আম। কারণ এ জেলায় রাজশাহীর পরেই আম ভাঙা হয়।
পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের অপর আম ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, এখন আড়তে যেসব আম আছে, তার সবই পরিপক্ক এবং অনেকগুলো গাছপাকা। সাধারণত ঢাকাসহ দেশের দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য ক্রেতারা পরিপক্ক কাঁচা আমটাই কেনেন। আর পাকা আমগুলো স্থানীয়ভাবে খাওয়ার জন্য বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার রোদ-ক্ষরায় আমের আকার গতবারের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়েছে। আর মৌসুমের শুরু থেকেই কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বাম্পার ফলন হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত উৎপাদনের যেই হার তাতে ব্যবসা ভালোই হবে। কিন্তু এর জন্য আমের দামটা বেশি পড়বে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে আম এসেছে এক লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি গাছে। এসব গাছ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। এ থেকে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে কম করে হলেও সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে ধারণা দেন জেলার এ শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার গাছ থেকে আম ভাঙার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে বলে দেওয়া হয়েছে কোন সময় কোন আম পরিপক্ক হবে এবং কোন আম ভাঙা যাবে। সেই হিসাবে গত ১৫ মে থেকে গোপালভোগ ও গুটি ভাঙা শুরু হয়েছে। ২৫ মের পর থেকে হিমসাগর (ক্ষিরসাপাতি) ও লখনা জাতের আম নামানো যাচ্ছে। আগামী ৮ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১০ জুন থেকে ফজলি, ২০ জুন থেকে আম্রপালি এবং ১৫ জুলাই থেকে চাষিরা আশ্বিনা আম ভাঙতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৭
এসএস/জেডএস