ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে এনবিআর’

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩২ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৭
‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে এনবিআর’

ঢাকা: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর’কে যোগান দিতে হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর এই রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যর্থ হবে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের।

বাজেটোত্তর প্রতিক্রিয়ায় এনবিআরে’র সক্ষমতা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বাংলানিউজের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন।  
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর’র উপর  যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

অতীতের রেকর্ড এমনই বার্তা দেয়। এনবিআর এতোবড় যোগান অতীতে কখনো দেয়নি এমনকি এই অর্থ যোগান দিতে এনবিআরে’র যে কাঠামো প্রয়োজন সেটাও নেই।   বাজেট শুধু দিলেই হবে না। এটাও চিন্তা করতে হবে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর কতটুকু সামর্থ রাখে। এনবিআরে’র সক্ষমতা আছে ১৪ শতাংশ অর্জন করার কিন্তু সেখানে ৩৪ শতাংশ চাপিয়ে দেওয়া নিতান্তই বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়। শেষ সময়ে দেখা যাবে গতবার যে সফলতা অর্জন করেছে তার চেয়ে এবার খারাপ হয়েছে।
 
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)র ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এনবিআর’কে যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে সেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাজেট শুধু দিলেই হবে না, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় সেটা অর্জনে এনবিআর সক্ষম কিনা সেটা নিয়েও সংশ্লিষ্ঠদের জ্ঞান থাকতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সহজে আদায় করা যায় এমন কর আদায়ের প্রতিই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ, নিয়মিত ও সৎ করদাতাদের ওপর করের বোঝা বেড়ে যাবে। এবার আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে দেশিয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবার ট্যাক্সও হারাতে হবে। সব মিলিয়ে এনবিআরকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ আছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু গাণিতিক হিসাবই প্রধান্য পেয়েছে। শুধু অর্থ আদায় করার চিন্তা করলে হবে না কিভাবে আদায় করা হবে সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। বাজেটে নতুন করে কিভাবে ট্যাক্সের ‍আওতা বাড়ানো হবে সেটা বলা হয়নি। কিন্তু যারা ট্যাক্স দিচ্ছেন না তাদেরকে কিভাবে ট্যাক্সের আওতায় আনা যায় সেটার বিষয়ে কিছুই বলা নেই। বিগত কয়েক বছরের সমীকরণ দেখলে, প্রতি অর্থবছরই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়েছে। গত অর্থবছরেও প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা সংশোধন করা হয়েছে। যেখানে বর‍াবরই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হচ্ছে সেখানে এতোবড় লক্ষ্যমাত্রা আদায় কিভাবে সম্ভব?  কাজেই বছর শেষে এবারও লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনতে হবে।
 
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড.ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো  ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।   কিন্তু পরে সংশোধিত হওয়ার ফলে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।   ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের শেষ সময়ে এসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তাহলে এতোবড় লক্ষ্যমাত্রা এনবিআর কিভাবে অর্জন করবে সেটা বোধগম্য নয়। শুধু গদবাধা লক্ষ্যমাত্রা দিলেই হবে না আদায়ের সক্ষমতাও থাকতে হবে।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআরে’র যে জনবল আছে তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। তবে এনবিআর সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবার ভ্যাটের উপর বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা যদি ভালো না হয় তাহলে ভ্যাটের উপর নির্ভরশীল হলে বিপদে পড়তে হবে। আবার আমাদের ট্যাক্স আরও বেশি আদায় হওয়ার কথা সেখানেও পিছিয়ে আমরা। কাজেই লক্ষ্যমাত্রা হতে হবে এমন যার কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। আর সেটাই হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
এসজে/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।