জানা যায়, মে মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১২৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা এপ্রিলের তুলনায় ১৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ কমার হার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। মে মাসে প্রবাসীরা ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সেখানে আগের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স আসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর গত বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলার ক্রমেই শক্তিশালী হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এছাড়া রমজান শুরু হওয়ায়ও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। আসন্ন ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে চলতি মাসে দেশে বড় অঙ্কের প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই মে) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৯১ কোটি বা ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ৩৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার ও বিশেষায়িত ২ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এছাড়া বরাবরের মতো মে মাসেও সর্বোচ্চ ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। এজন্য বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে- বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে যাওয়া, ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান শক্তিশালী রাখা ও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বেশ কিছু উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রবাসী আয় প্রেরণ ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে রেমিট্যান্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদার এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধারাবাহিক বৃদ্ধির পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কমে যায় প্রবাসী আয়। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এটি আমাদের জন্য আশার খবর। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
এসই/জেডএস