বিগত বছরগুলোতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় সময় কাটতে দেখা। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এসময়ে আয়ও হতো দ্বিগুণ।
অন্য বছর কাজ বেশি থাকায় তাঁত মালিকরা যেমন লাভমান হতেন তেমনি লাভবান হতেন তাঁত শ্রমিকরাও। কিন্তু এবারের ঈদ মৌসুমে কোনো রকমের ব্যস্ততা নেই ওই তাঁত পল্লীতে। এতে করে একদিকে যেমন হতাশায় রয়েছেন তাঁত মালিকেরা অপরদিকে কাজ না থাকার কারনে ঈদের আগে বেকার সময় কাটাচ্ছে শ্রমিকদের।
বুধবার (০৭ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের সাভার এলাকার তাঁত পল্লীতে। প্রায় দুই যুগ আগেও এক হাজারেরও বেশি তাঁতী পরিবার ছিলেন ওই এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে ওই এলাকার তাঁতী পরিবারের সংখ্যা মাত্র শ’খানেকের মতো।
ডিজিটাল সময়ের বিবর্তনে দিনের পর দিন কমে আসছে ওই এলাকার তাঁতী পরিবারের সংখ্যা। সময়ের পালাবদলে বাধ্য হয়েই বদলে যাচ্ছে তাদের নিজেদের পেশা। নামে মাত্র কয়েকটি পরিবার কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছে তাদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। তবে এভাবে আর কতোদিন কাটবে সে বিষয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাদিক ব্যবসায়ীরা।
বরাইদ ইউনিয়নের সাভার এলাকার ফইজুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে আব্দুল কাদের (৫০)। এক সময়ে বেশ বড় ব্যবসায়ী ছিলেন তারা। আয় রোজগারও ছিলো অন্য পেশার চেয়ে দ্বিগুণ। বর্তমানে নিজ এলাকাতেই ৪৫টি তাঁত যন্ত্র রয়েছে তার। কিন্তু কাজের চাহিদা না থাকায় বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র ৮/১০ টি তাঁত যন্ত্র। বিভিন্ন উৎসবে কাজের অর্ডার পেলে বাকী যন্ত্রগুলোও সচল হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সপ্তাহ দুয়েক পরেই ঈদ। কিন্তু কোনো রকমের কর্মব্যবস্ততা নেই তার কারখানায়। অন্য ঈদে ঢাকার বিভিন্ন নাম করা শো রুম থেকে শাড়ি, ওড়না ও থান কাপড়ের অর্ডার পেলেও এবারের ঈদে তার হিসেব শুন্যের কোঠায়। ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়াল দেখে সে দেশের পোশাকগুলো অল্প টাকায় এদেশে হাতের নাগালে পাওয়ার কারনেই এবার তাদের ব্যবসা মন্দা বলে ধারনা করেন তিনি।
একই অবস্থায় রয়েছেন প্রতিবেশী তাঁত ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন (৪৫)। মাত্র ১৫/১৬ জন শ্রমিক দিয়ে নাম মাত্র অবস্থায় সচল রেখেছেন নিজের কারাখানার ৭/৮ টি তাঁত যন্ত্র। কাজের অর্ডার পেলে অল্প টাকায় ভালো মানের শাড়ি কাপড় তৈরি করে দিতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কাজের অর্ডার না থাকার কারনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কিছু শাড়ি কাপড় তৈরি করে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পাইকারি দোকানে বিক্রি করেন তিনি। তবে ঈদ মৌসুমে সেই চাহিদাও একেবারে কম বলে মন্তব্য তার।
একই এলাকার ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৩২) বাংলানিউজকে জানান, কাজের অর্ডার পেলে সুলভ মূল্যে যে কোনো নকশায় শাড়ি কাপড় তৈরি করে দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু তাদের তৈরি শাড়ি কাপড়ের প্রচার প্রচরনা না থাকার কারণেই হয়তো অন্যদের চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছেন তারা। শাড়ি কাপড় ব্যবসায়ীদের অর্ডারের সঙ্গে তাদের ও তাঁত শ্রমিকদের ভাগ্য উঠানামা করে বলেও মন্তব্য তার।
নিজেদের দেশে তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ ও চাহিদা থাকলে পুনরায় তাদের এ ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন একাদিক ব্যবসায়ী ও তাঁত সংশ্লিষ্টরা। এতে করে একদিকে যেমন টিকে থাকবে দেশীয় তাঁত শিল্প অন্যদিকে কর্মসংস্থান হবে অনেক বেকার যুবকদের। এক্ষেত্রে নিজেদের দেশত্ববোধ ও সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
বিএস