ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলায় ২০১৯ সালের মধ্যে আবাসিক ও পরিবহন কাজে ৭০ শতাংশ গ্রাহকের কাছে এলপি গ্যাস সরবরাহে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনায় এলপি গ্যাসের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি চান ব্যবহারকারী ও উদ্যোক্তারা।
নতুন ভ্যাট আইনে সিলিন্ডারের আকার ভেদে ১ হাজার ২৮ শতাংশ থেকে ১ হাজার ৫শ’ ৮৯ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের চাপ কমাতে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে এলপি গ্যাসের ট্যারিফ মূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। বর্তমানে এ খাতে ভ্যাটের হার ট্যারিফ মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ। এর ফলে বাড়ছে এলপি গ্যাসের ব্যবহার।
কিন্তু নতুন (২০১২ সালের ভ্যাট আইন) ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারণ পদ্ধতি প্রত্যাহার করে সার্বজনীন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের বিধান করা হয়েছে। নতুন আইনের ধারা-২৬ এর আওতায় প্রথম তফসিলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা বিবেচনায় বেশ কিছু পণ্যকে ভ্যাট অ্যবাহতি দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়া পণ্য ও সেবার মধ্যে রয়েছে মানুষের মৌলিক চাহিদা, কৃষি, মৎস্য, গবাদি পশু, স্থাবর সম্পত্তি, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা। তবে এ তালিকায় জ্বালানি সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবা, বিশেষ করে এলপি গ্যাসকে রাখা হয়নি। এ কারণে জ্বালানির অন্যতম উৎস এলপি গ্যাসের ওপরও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যা আগামী ০১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান মাহবুব আলম বলেন, সরকার এলপি গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এলপি গ্যাসে ভ্যাটের হার বেড়ে যাওয়ায় এ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে যাবে। কারণ, দাম বাড়লে এলপিজির ব্যবহার জনপ্রিয় করতে সরকারের সকল কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভ্যাট নির্ধারণে বিদ্যমান পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১০ কেজি আকারের সিলিন্ডারের ট্যারিফ মূল্য ধরা হয় ৩৫ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয় ৫ টাকা ২৫ পয়সা। ভ্যাট ছাড়া এ আকারের প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের বিক্রয় মূল্য ৩শ’ ৯৭ টাকা ৭৫ পয়সা। ভ্যাটসহ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এই সিলিন্ডার ৪শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
একইভাবে বর্তমানে ১১ থেকে ৩০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ৯ টাকা ভ্যাটসহ সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ৮শ’ ৯৭ টাকা। ৩১ থেকে ৪৫ কেজির সিলিন্ডারে ভ্যাট ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এ সিলিন্ডারের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ১শ’ ৩০ টাকা।
অন্যদিকে নতুন পদ্ধতিতে বিক্রয় মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের ফলে ৫ থেকে ১০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট আদায় করা হবে ৩শ’ ১৬ টাকা ৬৯ পয়সা। এতে এই সিলিন্ডারের সরবরাহ মূল্য দাঁড়াবে ৪শ’ ৫৪ টাকা, যা বর্তমানের তুলনায় ৫৪ টাকা বেশি।
একইভাবে নতুন হারে ১১ থেকে থেকে ৩০ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট ১৩৩ টাকা ২০ পয়সা এবং সরবরাহ মূল্য ১ হাজার ২১ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়াবে। যা বর্তমানের তুলনায় ১শ’ ২৪ টাকা বেশি। ৩১ থেকে ৪৫ কেজি আকারের সিলিন্ডারে ভ্যাট ৩শ’ ১৬ টাকা ৬৯ পয়সা ও সরবরাহ মূল্য ২ হাজার ৪শ’ ২৭ টাকা ৯৪ টাকায় দাঁড়াবে। এ আকারের সিলিন্ডারে দাম বাড়বে প্রায় ৩শ’ টাকা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের হিসাব অনুসারে দেশে বর্তমানে এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১০ লাখ টন। এর বিপরীতে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ৫ লাখ টন।
এ খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন উপকরণের আমদানি পর্যায়ে কর অব্যাহতি প্রদান ও রেয়াতি হারে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে। ফলে বিপিসি’র পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে।
বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ পরিবার রান্নার কাজে পাইপলাইনে গ্যাস ব্যবহার করে, যা দেশের মোট পরিবারের মাত্র ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশ পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
এসআই/এএসআর