বৃহস্পতিবার (৮জুন) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ইসলামি ব্যাংকিং অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।
প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান। বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক এম. আজিজুল হকসহ ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।
বিআইবিএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামি ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো জঙ্গি অর্থায়নের অপপ্রচার। এছাড়া ‘ইসলামি ব্যাংকিং আইন’ না থাকা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং সেবার বহুমুখীকরণের অভাব ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অন্যতম বাধা। জঙ্গি অর্থায়নের অপপ্রচার সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে শতভাগ সচ্ছতা এবং গাইডলাইন মেনে চলতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ইসলামি ব্যাংকের আর্থিক ও পরিচালন অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়, অন্যান্য সাধারণ ব্যাংকের তুলনায় ইসলামি ব্যাংকিং সবদিক দিয়েই লাভজনক। ২০১৬ সালে সাধারণ ব্যাংকিংয়ে নেট প্রফিট মার্জিন যেখানে ১ দশমিক ৯, সেখানে ইসলামি ব্যাংকিং এ ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। একইভাবে মোট সম্পদের বিপরীতে সাধারণ ব্যাংকিংয়ে আয় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিআইবিএম বলছে, ইসলামি ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণের হারও অনেক কম। ২০১৬ সালে অন্যান্য সাধারণ ব্যাংকিং এ খেলাপি ঋণের হার যেখানে ৯ দশমিক ২ শতাংশ সেখানে ইসলামি ব্যাংকিং এ ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
দেশের ব্যাংকিং ব্যাবস্থায় ইসলামি ব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে বিআইবিএমের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মোট ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিং। বাংলাদেশ বিশ্বের ১০ নম্বরে অবস্থান করছে। যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুদান ও ইরান। তারা শতভাগ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চলছে। সৌদি আরবের অবস্থান চতুর্থ। যাদের ৫১ দশমিক ১ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিং। এই র্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ১৩ নম্বরে।
কর্মশালায় ইসলামি ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর উপর মত দেন ডেপুটি গভর্নর। তিনি বলেন, ইসলামি ব্যাংকিং বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো আইন নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া এই ব্যাংকিং সেক্টরে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতেও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, সারাবিশ্বে ইসলামি ব্যাংকের ৬০ শতাংশ অমুসলিম গ্রাহক রয়েছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরি বলেন, বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ কাউন্সিলের সদস্যদের ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা দুটোই কম।
ইসলামি ব্যাংকগুলোকে প্রফেশনাল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক মো. আজিজুল হক। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি প্রফেশনাল না হয়ে ধর্মীয়ভিক্তিক হয়ে যায়। এটা ক্ষতিকর। তিনি বলেন, যে সকল ব্যাংকে শরিয়াহ কাউন্সিল শক্তিশালী নয়, সেখানে ইসলামি ব্যাংকের কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন কঠিন। বিশেষ করে নতুন নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, এতো বছরেও ইসলামি ব্যাংকিং এ কোনো আইন নেই। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আদলে ইসলামি ব্যাংকিং আইন করতে হবে। যাতে সব ব্যাংক এক প্ল্যাটফর্মের নিচে আসতে পারে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, ইসলামি ব্যাংকিং মূলত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়া হয়। তবে অনেকে এ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের ধোঁকা দিচ্ছে। এ ধরণের কার্যক্রম ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। তিনি ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জুন ৮,২০১৭
এসই/আরআই