রমজান উপলক্ষে গত ১৫ মে থেকে সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা ও সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ৮৫ টাকায় বিক্রি করছে সরকারি এ সংস্থাটি।
বেধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৩ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৫ কেজি ছোলা কিনতে পারবেন।
বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাজার মূল্য থেকে চিনিতে ১৮ টাকা, ছোলায় ২০ টাকা, মসুর ডালে ১০ টাকা ও সয়াবিন তেল প্রতিলিটারে ২৩ টাকা কম নিচ্ছে টিসিবি।
এর মধ্যে চিনি, সয়াবিন তেল ও ছোলার দাম বাজার মূল্যের চেয়ে গড়ে ২০ টাকা কম হওয়ায় এই তিন পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ একটু বেশি। কিন্তু চাহিদার ৩০ ভাগ যোগান দিতে পারছে না টিসিবি।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাব ও সচিবালয়ের সামনের সড়কে টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা যায়। কিন্তু দুপুরের মধ্যেই এই ট্রাকের চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল শেষ হয়ে যায়। অনেককেই দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে টিসিবির ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় ক্রেতা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ৭০ টাকা দরে ২ কেজি ছোলা নিয়েছি। কিন্তু চিনি পাইনি। চিনি নাকি সকালে শেষ হয়ে গেছে।
শুধু প্রেসক্লাব ও সচিবালয়ের সামনে নয়, রাজধানীর অধিকাংশ পয়েন্টেই দুপুরের মধ্যেই চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল শেষ হয়ে যায়। অথচ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা। অনেকে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। বিক্রেতারা তাদের পরের দিন সকাল ১০টার মধ্যে আসার পরামর্শ দেন।
প্রেসক্লাবের সামনে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা আবদুল মান্নান অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোজার কেবল মাঝামাঝি এখনই চাহিদা মতো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সচিবালয় এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আকরাম বলেন, দুই ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে থেকে এখন শুনছি ছোলা ও চিনি নেই।
সচিবালয় গেটের টিসিবির পণ্য বিক্রেতা জানান, দৈনিক ট্রাক প্রতি তিনশ থেকে চারশ’ কেজি চিনি, আড়াইশ থেকে তিনশ কেজি মসুর ডাল, তিনশ থেকে চারশ লিটার সয়াবিন তেল এবং তিনশ থেকে চারশ কেজি ছোলা বরাদ্দ থাকে। চাহিদা যদি বরাদ্দের বাইরে চলে যায় আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে ডাল ও ছোলায় তেমন কোনো সমস্যা হয় না। চিনি ও সয়াবিন তেল ঘাটতি পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহের জন্য টিসিবির অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। যে পরিমাণ পণ্য টিসিবি আমদানি করে থাকে তার ব্যয় বাবদ অর্থ মন্ত্রণালয়কে কাউন্টার গ্যারান্টি দেখিয়ে ঋণ নিতে হয়। সেটিরও সর্বোচ্চ আওতা মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। আবার এ পরিমাণ ঋণের অর্থও প্রচলিত সুদ ব্যবস্থায় পরিশোধ করতে হয়। ফলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
ঢাকায় ৩০টি স্থানে, চট্টগ্রামে ১০টি স্থানে, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি করে এবং বাকি জেলা সদরগুলোতে ২টি করে ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া টিসিবির নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র ও ২ হাজার ৮১১ জন পরিবেশকের কাছ থেকেও ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এজেড/এসএইচ