এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সারাদেশের কাস্টমস, এক্সাইজ, ভ্যাট কমিশনারেট ও এনবিআর জুড়ে কালো ব্যাচ ধারণ ও সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, একাধিকবার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কর্মকর্তারা অপদস্ত, লাঞ্ছিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এছাড়া অনেক শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রাণ নাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্ত আজ পর্যন্ত তাদের কোনো বিচার হয়নি।
গত ১২ জুন জেলা কাস্টমসের ৯ কর্মকর্তা কুমিল্লার লাকসামে রাজস্ব আহরণের সময় মারধরের শিকার হন। এ সময় শ্লীলতাহানি শিকার হন দুই নারী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রেশনিং ও ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তারা কিছুই পাচ্ছেন না। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২০১৬ সালের ১২ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর রেশনিং ও ঝুঁকি ভাতার বিষয়টি নিয়ে প্রথম একটি চিঠি দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। সেই থেকে চলতি বছরের ১২ জুন মোট ৭টি চিঠি এনবিআরের মধ্যেই চালাচালি হয়েছে। তবে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় চিঠি যাওয়ার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে। যেখান থেকে বিষয়টির জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন হবে।
অন্যদিকে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, মরিশাস, ফিজি, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিশেষ ভাতা থাকলেও বাংলাদেশে নেই। তাই কর্মকর্তাদের প্রশ্ন বিগত ১টি বছর ধরে কর্মকর্তাদের দাবিটির কোনো গুরুত্ব না দিয়ে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কর্মকর্তাদের রেশনিং ও ঝুঁকিভাতার বিষয়টি অজানা কারণে আটকে আছে।
কাস্টমস আইনে রয়েছে, যদি কোনো পরিবহন, জাহাজ কিংবা বিমানে চোরাচালানী পণ্য আছে এমন তথ্য থাকলে প্রয়োজনে বিমান বা জাহাজে গুলি করে থামিয়ে তল্লাশি করা যাবে। কিন্তু কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কোনো কর্মকর্তাদের অস্ত্র নেই। ফলে আইনে থাকলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই এনবিআরের।
সম্প্রতি এনবিআর থেকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কর্মকর্তারাদের ইউনিফর্ম পরিধান নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। যেখানে সিপাহী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ও উপ-কমিশনার অবধি ইউনিফর্ম পরিধানের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেও কর্মকর্তাদের দাবি কমিশনার অবধি ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করা হোক।
সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক কর্মকর্তারা চোরাচালানী রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছেন। জীবন বাজি রেখে চোরচালানী পণ্য জব্দ করছেন। যেখানে দেশজুড়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হচ্ছে সেখানে তাদের দিনদিন ঝুঁকিও বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস থাকলেও কোনো ফলা আসেনি অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, যারা চোরাকারবারীর সঙ্গে যুক্ত তারা অনেক শক্তিশালী। বারবার শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। এজন্য অন্য বাহিনীর ন্যায় এনবিআরে শুল্ক কর্মকর্তাদের ঝুঁকির বিনিময়ে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এনবিআর এবিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক। এনবিআর খুব শিগগিরই প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে দ্রুত উগ্যোগ গ্রহণ করবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কাজে ঝুঁকি আছে। বিয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি অচিরেই বিষয়টির সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
এসজে/বিএস