ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঢাকার ঈদবাজার মাতাচ্ছে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
ঢাকার ঈদবাজার মাতাচ্ছে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক ঢাকার ঈদবাজার মাতাচ্ছে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক

নীলফামারী: রোজার ছুটি চলছে স্কুল-কলেজে। এ সুযোগে বাড়তি আয়ের আশায় অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ঝুঁকেছে কারচুপির কাজে। ঈদুল ফিতরে কারচুপির শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস ও ওড়নার ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর রাজধানীর ঢাকার ঈদবাজারে চাহিদা মেটাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ৩০ হাজার নারী ধুমসে চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মযজ্ঞ।

শনিবার (১০ জুন) সরেজমিনে সৈয়দপুর শহরের উত্তরা আবাসন প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেল, শতশত নারী কাপড়ে কারচুপির কাজ করছেন। বিশেষ ফ্রেম পেতে তাতে টান টান করে কাপড় বেঁধে নারীরা আপন মনে বসাচ্ছিলেন কারচুপি।

সেখানে কথা হয় আবাসন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী কোমলের সঙ্গে।

সে বলল, ‘রোজা উপলক্ষে স্কুল ছুটি। তাই বোনের সঙ্গে কারচুপির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। এতে বাড়তি কিছু আয় হবে। ‘ কোমলের বাবা বেঁচে নেই। তার মা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। ঈদের কারচুপির কাজ করে ১০ হাজার টাকা আয় করবে সে। যা দিয়ে মা ভাই বোনদের জন্য সে কিনবে ঈদ-উপহার।

আবাসন এলাকায় কথা হয় কারচুপিশিল্পী পারভীন আক্তারের (৩৫) সঙ্গে। হোটেলশ্রমিক আমিনুর রহমানের স্ত্রী তিনি। কাজ করছিলেন মেয়ে বৃষ্টি (১৭) ও ঝর্ণাকে (১৩) সঙ্গে নিয়ে।

তিনি বললেন, ‘ সারা বছরই কারচুপির কাজ চলে। তবে ঈদে এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এখন রোজার মাস বলে স্কুল- কলেজ বন্ধ। এ সুযোগে মেয়েদের সঙ্গে নিয়েছি। কারচুপির কাজ করে তারাও বাড়তি আয় করবে। ‘

সৈয়দপুর শহরের কাজিহাট, মুন্সিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, ইসলামবাগ, গোলাহাট, রসুলপুর, বার্মাসেল প্রভৃতি মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে চলছে কারচুপির কাজ করা পোশাক তৈরির কাজ। এছাড়াও উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ি, বাঙ্গালিপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতা মধুপুর ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামেও নারীশ্রমিকরা প্রচুর কাজ করছেন।

কারচুপিশিল্পী রোশনি বললেন, ‘একাজে সৈয়দপুরের শ্রমিকরা অনেক দক্ষ। তাই ঢাকা থেকে প্রচুর অর্ডার মেলে। প্রতিমাসে হাজার হাজার শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসের অর্ডার আসে আমাদের কাছে। আর ঈদ এলে তো কাজের ফুরসতই থাকে না। চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। মহাজনেরা ঢাকা থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে কাপড়েও উপকরণ বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেন। আমরা কেবল কারচুপির কারুকাজ করি। ‘

মহাজন আরমান আলী, মো. তারেক ঢাকা থেকে ই-মেইলে অর্ডার গ্রহণ করেন। পরে নকশা (ডিজাইন) বুঝিয়ে দেন নারীশ্রমিকদের। ঘরে-ঘরে গিয়ে দিয়ে আসেন জর্জেট বা শিপন কাপড়ের থান, বিভিন্ন রকম চুমকি, রেশমি সুতা, গাম ইত্যাদি। কাপড়ে চুমকি করতে এসব উপকরণের দরকার হয়। মহাজনের অর্ডার পেলেই শ্রমিকরা রাত দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারচুপির কাজে।
তিনি বলেন, ‘কাপড়ে কারচুপি বসিয়ে একজন নারীশ্রমিক দিনে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করেন। ‘

মহাজন আরমান আলী বলেন, ‘উপকরণ চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর ভারত থেকে আনা হয় কাপড়। চাহিদা বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়। তবুও ঢাকার অর্ডার বলে কথা! ঈদ-বাজারকে সামাল দিতে কম লাভ মিললেও আমাদের শ্রমিকরা কারচুপির কাজে ব্যস্ত থাকে। আমরা সময়মত ঢাকায় তা সরবরাহ করি। ‘

সৈয়দপুর কারচুপি সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকার বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক বিক্রি হয়। বিয়ে-ঈদে এ পোশাকের অনেক চাহিদা। সৈয়দপুরের ৩০ হাজার নারীশ্রমিক কারচুপির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও এখন মহাব্যস্ত কারচুপির কাজ নিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।