চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন এনবিআরে জমা দেবে। আর সে তদন্ত প্রতিবেদনের পরেই শক্ত অবস্থানে যাবে সংস্থাটি।
এলটিইউ সূত্র জানায়, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও রবি (বর্তমানে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হয়ে রবি নামে চালু আছে) ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তনের নামে নতুন সিম বিক্রি করেই প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।
ফাঁকি দেওয়া অর্থের তথ্য উদ্ঘাটনে এলটিইউ’র অতিরিক্ত কমিশনার কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে আছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ১ জন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের ১ জন এবং তিন মোবাইল ফোন কোম্পানির ৩ জন প্রতিনিধি। কমিটির সদস্য সচিব এলটিইউ’র সহকারী কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি।
এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে সিম পরিবর্তনের নামে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয় কোম্পানিগুলো। সুদসহ বর্তমানে এটি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে দাঁড়িয়েছে। বহুল আলোচিত ইস্যুটি হাইকোর্ট ঘুরে বর্তমানে এনবিআরের ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। খুব শিগগিরই মামলার রায় হবে। সে রায় এনবিআরের পক্ষে আসবে বলে সংশ্লিষ্ঠদের ধারণা। এ মামলা দায়েরের পরে তখন কোম্পানিগুলো যেসব তথ্য এনবিআর’কে দেয়, তার বেশিরভাগই মিথ্যা ছিলো বলেও জানিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট।
তবে মোবাইল কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা সিম পরিবর্তনের নামে কোনো রাজস্ব ফাঁকি দেয়নি। কোম্পানিগুলোর কাছে যে তথ্য ছিলো, সেগুলো এনবিআরে জমা দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের সকল নিয়ম মেনেই তারা কাজ করছে। এখানে রাজস্ব ফাঁকির কোনো প্রশ্নই আসে না।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটনে মোবাইল কোম্পানিগুলো এনবিআরকে সহযোগিতা করবে বলে কথা দিয়েছিলো। কিন্তু কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে বারবার বার্তা দিয়ে অবহিত করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি কোম্পানিগুলো পরিদর্শন করে তাদের সিস্টেমে সিম পরিবর্তনের একটি তথ্যও পাওয়া যায়নি। সুতরাং, কোম্পানিগুলো এনবিআরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে। আর সিম পরিবর্তনের নামে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোবাইল কোম্পানিগুলো কখনো ভ্যাট দিতে চায় না। আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। কিন্ত কথা ছিলো, সিম পরিবর্তনের নামে কোনো রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে কি-না- সে বিষয়ে তারা আমাদেরকে (এনবিআর) তথ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। কিন্তু উল্টো তারা কালক্ষেপণ করছে, এটি কিভাবে বানচাল করা যায়’।
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যতোগুলো মামলা হয়েছে, সেখানেও তারা ভ্যাট না দিয়ে আইনের আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, মামলার রায় এনবিআরের পক্ষেই যাচ্ছে। এছাড়া দাবিনামা জারি করলেই কোম্পানিগুলো হাইকোর্টে রিট করে। সেখানে হেরে গেলে আপিলাত ট্রাইব্যুনালে যায়। সেখানেও হেরে গেলে আপিল বিভাগে যায়। সেখানে হেরে যাওয়ার পর অর্থ পরিশোধ করে। সুতরাং, ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া মোবাইল কোম্পানিগুলোর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এসজে/এএসআর