ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরিব একাকার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরিব একাকার! সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরিব একাকার,ছবি: আবু বকর

সিলেট: ছয় বছরের মেয়ে তুলির সুন্দর জামা ও জুতা কিনেছেন নগরীর তালতলার বাসিন্দা এনামুল কবির এনু। ঘরে বৃদ্ধ বাবার একটি লুঙ্গি ও বৌয়ের জন্য শাড়িও কিনেছেন তিনি।

স্বজনদের মুখে হাসি ফোটাতে স্বল্প বেতনে ছোট একটি বেসরকারি চাকরিজীবী এনামুলের এই চেষ্টা। সাধ্যের মধ্যে পছন্দের জামা-কাপড় কিনতে মার্কেট ওল্ট-পাল্ট করেছেন তিনি।

কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনতে পারেননি।

এনামুলের সহসাই জবাব, ‘ছোট বেলায় নিজে নতুন জামা কাপড় পরতে বায়না ধরতাম। পরে আনন্দ পেতাম। এখন পরিয়ে আনন্দ পাই। ঈদে স্বজনদের খুশি রাখতে পারলেই হয়। নিজে না হয় আয়রন করা পাঞ্চাবি দিয়ে চালিয়ে দেবো। ’সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরীব একাকার,ছবি: আবু বকরপক্ষান্তরে ‘জামা ও জুতো কেনা শেষ করে ড্রেসের সঙ্গে মানানসই গহনা কিনবেন সিলেটের একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ছাত্রী সাদিয়া জান্নাত রিয়া। তবে পুতির বা মাটির তৈরি গহনাই পছন্দ তার। ঘর সাজানোর জন্যও কিনবেন শো-পিস। ঈদবাজারে নিজের কেনাকাটার পছন্দের কথা বাংলানিউজকের কাছে এভাবেই ব্যক্ত করেন বান্ধবীকে নিয়ে মার্কেটে আসা রিয়া।

তার মতো অসংখ্য নারী পুরুষ রয়েছেন, যারা শখের পঞ্চপট পূরণে সক্ষম। বিপরীতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ফুটবাজার। নগরীর জিন্দাবাজার শুকরিয়া মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপনী বিতানে যেখানে কসমেটিকস ও জুতার দোকানে ভীড়। সেখানে অনেকের পরিবারে নতুন জামা-কাপড় ঝুটে না। সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরীব একাকার,ছবি: আবু বকরসিলেট নগর ঘুরে দেখা গেছে, ঈদবাজারে বিত্তশালী ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা বিপনী বিতানগুলোতে ভীড়। মার্কেট কিংবা অলিগলিতেও ভীড় জানান দেয় ঈদুল ফিতর অতি সন্নিকটে। দিনে কিংবা রাতে, দম ফেলার ফুসরত নেই দোকানিদেরও। জামা-কাপড়, জুতা, কসমেটিক ও চশমা ঘড়ির দোকান থেকে ফুটপাত সবখানে ক্রেতা সমাগম। সিলেটের ঈদবাজারে এখন এমন ব্যস্ততা। কারো কাপড় কেনা শেষ, অবশিষ্ট রয়েছে জুতো। কেবল পরিবারের ছেলে-বুড়োদের রা‍ঙিয়ে তুলতে প্রয়োজন চশমা-ঘড়ি। তাই সেদিকে ছুটছেন তারা। সিলেটে ফুটবাজারে ধনী-গরীব একাকার,ছবি: আবু বকরতবে বিপনী বিতান ছেড়ে ফুটবাজারে এলে দেখা মেলে ভিন্ন দৃশ্যের। ফুটপাতেও ক্রেতাসমাগম। পছন্দের জামা কাপড় বেছে কিনে নিতে মানুষের চেষ্টার শেষ নেই। কাপড়ের বাজারে আকাল। সব কিছুতে দাম বেশি। তাই নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের চাহিদা মেটাচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলো।

নগরীর জিন্দাবাজারে লন্ডন ম্যানশনের সামনের ফুটপাতে ভ্যানে করে শিশু-কিশোরদের শার্ট-প্যান্ট বিক্রিকারী হকার সুমন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ফুটপাতে যে কাপড় বিক্রি করি। মার্কেটেও সেই কাপড় পাবেন। তবে দাম কয়েকগুন বেশি। ফুটপাতে গরীর লোকদের পাশাপাশি অনেক ধনী লোকরাও কাপড় কিনে নেয়, বলেন সুমন।

এসময় তার কাছ থেকে কাপড় কিনে নিচ্ছিলেন সিলেটের স্বনামধন্য আবৃতিকার মোকাদ্দেছ বাবুল। তিনি বলেন, এক্সপোর্টের অনেক কাপড় ফুটপাতে মিলে, যা মার্কেটের কাপড়গুলোকেও হার মানাবে। বিশেষ করে ফুটবাজারে শিশুদের অনেক কাপড় রয়েছে মানসম্মত। অথচ আমরা মধ্যবৃত্তরা লজ্জায় ফুটপাতে আসি না। চড়া দাম দিয়ে মার্কেট থেকে কিনতে হয়।

এদিকে ঈদবাজারকে কেন্দ্র করে কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মার্কেট ও বিপনী বিতানের ব্যবসায়ীরা। দোকানে গচ্ছিত পুরাতন কাপড় (প্যান্ট, শার্ট, শিশু-কিশোরদের পোশাক) ভ্যানে করে লোকজন দিয়ে ফুটপাতে রেখে বিক্রি করছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী দোকানের সামনে ফুটপাত বসিয়ে পুরাতন মালামাল ছাড় দিয়ে বিক্রি করছেন। ফলে মধ্যম আয়ের লোকজনের দৃষ্টি কাড়ছে ফুটবাজার। অনুসন্ধানে এমন তথ্য মিলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এনইউ/এএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।