বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু একথা বলেন।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটকে কেউ কেউ নির্বাচনী বাজেট হিসেবে সমালোচনা করছেন।
তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। যখন ভ্যাট আইন পাশ হয় তখন কিন্তু সর্বসম্মতভাবে আইনটি পাশ করা হয়। দু:খজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন, বাজেট সমালোচনার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে কটাক্ষ করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত অনভিপ্রেত, দু:খজনক এবং অনাকাঙ্খিত। বাজেট পেশের মানে এটা চাপিয়ে দেয়া হলো। বিগত দিনে দেখেছি আলোচনার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু অনুধাবন করে যে নির্দেশনা দেন, পরবর্তীতে সে অনুযায়ী বাজেট পাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাজেট পরিপূর্ণতা আসবে এটাই নিয়ম। কিন্তু সে দিকে অপেক্ষা না করে সমালোচনার নামে কটাক্ষপূর্ণ, কটূক্তিপূর্ণ কথা দু:খজনক। এ ধরনের কথা বলা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ভ্যাটের ওপর অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাজেটে ১০৪৩টি পণ্যের ভ্যাট অব্যহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা কিন্তু এগুলো বলছেন না। চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, গুড়, মাছ, মাংস, সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, ভুট্টা, বার্লি, ভোজ্য তৈল, গম, সুজি লবণসহ ৫৪৯টি নিত্যপণ্য, কৃষি গবাধিপশু ও মৎস চাষের ৪০১টি পণ্য, ৯৬টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, সেবা গণস্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা প্রশিক্ষণ দাতব্য প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সে দিকে আলোচনা করেন নাই। শুধু সমালোচনা মুখর হচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে এতোগুলো দিক এঁটে দেশের জন্য করা হলো সে দিকে নজর নেই। স্বৈরাচার শাসনের ফলে যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের চিন্তাধারা সে ধরনের থেকে যায়।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, যখন প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যহত আছে, সেই মুহূর্তে কোনো একটি অপশক্তি সেই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে কর্মসূচির মাধ্যমে গণহত্য মূলক কর্মসূচিতে আত্মনিয়োগ করে। তারা যখনই সুযোগ পায় গণহত্যা চালায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছেন, তারা কারা। এদের পরিচয় কি? এটা আমাদের বুঝতে হবে। এরা তারাই যারা এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল। হ্যাঁ-না ভোটের ব্যবস্থা করেছিল।
হেফাজতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হেফজতের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। বুঝতে হবে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার কাছে যে কোনো সংগঠনের আবদার, আবেদন, নিবেদন করার অধিকার রয়েছে। তাই কওমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে তারা যদি এসে কথা বলেন এটা প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই শ্রবণ করবেন। এবং সেটা কিভাবে করা যায়, না যায়, এটা তো তার এখতিয়ার। এই দেশের শিক্ষানীতির অনুকূল পরিবেশে যদি কিছু করা সম্ভব হয়, করতে হবে। না করা গেলে করা হবে না। কিন্তু আলোচনার ক্ষতিটা কোথায়? আমরা বুঝতি পারলাম না। এখানে জাত যাওয়ার কি হলো। আজকে যারা সমলোচনা করছেন, এই হেফাজত যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছিল তখন তো তারা হেফাজত বিরোধী কথা বলেন নাই। হেফাজতের সমালোচনা করেন নাই। তখন তো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ অবলম্বন করেন নাই। একটি বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে কি করে এতো কথা আসে। দেশে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি। সেই জঙ্গিবাদ থেকে যদি ধর্ম পরায়ণ মানুষগুলোকে আলাদা করা যায়, যারা ধর্মভিত্তিক দলে বিশ্বাসী বা ধর্মভিত্তিক কর্মকাণ্ডে রয়েছে তাদেরকে যদি ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নেওয়া যায়, তাকে ক্ষতি কি। আজকে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষণীয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নীতির কোনো পরিবর্তন হলো কি না। তার গতিধারার পরিবর্তন হলো কি না। তিনি যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তার ব্যতিক্রম হলো কি না। তিনি যে আদর্শে বিশ্বাসী সেই আদর্শচ্যুত হলেন কি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এসএম/এসকে/জেডএম