জানা যায়, সরকারের অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের পাঠানো প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ জুন সংসদ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভ্যাট আইন স্থগিতের ঘোষণা দেবেন তিনি।
নতুন প্রস্তাবিত ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ একক ভ্যাটহার রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে আপত্তি ওঠে সরকারের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন মহলে।
বর্তমানে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন চালু রয়েছে। বিদ্যমান আইন রেখেই সামান্য সংশোধন করে কীভাবে রাজস্ব বাড়ানো যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এনবিআর। তবে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তারা।
জানা যায়, নতুন ভ্যাট আইন ইস্যুতে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব এনবিআর চেয়ারম্যান ও ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ায় পুরনো ভ্যাট আইন বহাল রেখে আগামী বছরের বাজেট (২০১৭-১৮) বাস্তবায়ন হলে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেবে। এতে আগামী অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এতে বছরজুড়েই বাজেটের অর্থায়নের চাপে থাকবে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সংসদে বাজেটের বাড়তি অর্থায়ন এবং নতুন বাজেটের বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশদ পরিকল্পনা তুলে ধরবেন বলে জানা যায়।
নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করে বিকল্প অর্থায়নের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। ভ্যাট আইন কার্যকর না হলে রাজস্ব আয়ে যে ক্ষতি হবে, তা পোষাতে হলে দু’টি পথ খোলা আছে। একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ কমানো। অন্যটি ব্যাংক থেকে আরও বেশি ঋণ নেওয়া।
এবারের বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯১ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেট তৈরির অন্তত তিন মাস আগেই প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর। এতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে যুক্ত করার চেষ্টা থাকে। সেই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত থাকেন। তবে বাজেট সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন না বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। শুধু তাই নয়, বাজেট কাঠামো তৈরির পর এবং অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা প্রস্তুতের পর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অনুমোদন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আরোপ করলে কোন কোন পণ্য ও সেবা থেকে রাজস্ব কমবে, তার একটি খসড়া উপস্থাপন করা হয়। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে বাড়তি ভ্যাট আদায় করতে পুরনো আইনের কী কী পরিবর্তন দরকার হতে পারে, আলোচনা হয় তা নিয়েও।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, নতুন আইন বাস্তবায়ন না হলে তা অর্জন কঠিন হবে।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন পণ্যে শূন্য থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মোট আটটি ধাপে ভ্যাট আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮-১০টি খাতের জন্য সমহারে সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০টির মতো খাতে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে। ১৯৯১ সালের আইনে ইট, রড, এলপিজিসহ যেসব পণ্যে ট্যারিফ ভ্যালুতে ভ্যাট দিতে হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে ৫-১০ শতাংশ। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে নতুন করে ৫-১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হতে পারে আবাসন, জুয়েলারি, সিরামিকস, প্লাস্টিকসহ বেশকিছু পণ্য ও সেবায়।
এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকেই ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পুরনো বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারের পরিবর্তে অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধনও সম্পন্ন করেছে এনবিআর। নতুন আইন বাস্তবায়ন না হলে অনলাইন প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে পুরনো পদ্ধতিতে ভ্যাট আহরণ করতে হবে। আর পুরনো আইনে ভ্যাট আহরণ করতে গেলে সময় প্রয়োজন বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা।
১ জুন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের ব্যবসার বাস্তব অবস্থা বিবেচনা না করেই ভ্যাট আইন প্রণীত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য হিসাব সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও ১৫ শতাংশ একক ভ্যাটহার বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
ভ্যাট আইন স্থগিতের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবে বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারেও কাজ করছে এনবিআর।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এএ