ব্যাংকটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর আরও ১০ কোটি ৬৮ লাখ ৩ হাজার ৬৬৪ টাকা ১০ পয়সা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁকি দেওয়া ওই অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরিশোধ করতেই হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। কিন্তু ওই বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে এ খাতে কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি ব্যাংকটি।
২০১০ সালে সংশোধিত মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭২ ও ধারা ৫এর উপধারা (৪) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণকারীর ওপর ৯ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করে। তবে আবাসিক কাজে ব্যবহারের জন্য প্রদত্ত সুবিধা এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অনধিক ১৫০ বর্গফুট আয়তনের কোনো স্থাপনা এ ভ্যাটের অন্তর্ভূক্ত হবে না।
এছাড়া ২০১১ সালের জুলাই ও পরবর্তী সময়ের পর থেকে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর ভাড়া গ্রহণকারীর কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করছে এনবিআর।
আরও জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে স্থান ও স্থাপনার বিপরীতে কি পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করেছে, সে তথ্য দিতে প্রিমিয়ার ব্যাংককে অনুরোধ জানায় এনবিআর। কিন্তু কোনো তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি ব্যাংকটি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত ভাড়া বাবদ খরচের হিসাব আমলে নিয়ে তার ওপর মূসক (ভ্যাট) হিসাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
সে তথ্যানুসারে ব্যাংকটি ২০১১ সালে ৪ কোটি ১ লাখ ৯৯ হাজার ১০২ টাকা, ২০১২ সালে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ১৬ হাজার ১৫৯ টাকা, ২০১৩ সালে ৭ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৫ টাকা, ২০১৪ সালে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ২০৮ টাকা ৭৩ পয়সা ও ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ টাকা ৯৪ পয়সা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া মোট ৩২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ১৫১ টাকা ৬৭ পয়সা সুদসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি টাকারও বেশি।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ফজলে রশিদকে একাধিকবার ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৩২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ১৫১ টাকা ৬৭ পয়সার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর সঙ্গে প্রতি মাসে ২ শতাংশ করে সুদ যুক্ত হবে। সে হিসাবে প্রায় ৫২ কোটি টাকার বেশি ফাঁকি দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভ্যাট ফাঁকির মামলাটি উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। ঈদের পরই মামলার রায় হবে। ভবন ভাড়া বাবদ ব্যাংকটি কি পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে, সে তথ্য চাওয়া হলেও তারা দেয়নি। সুতরাং, ব্যাংকটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে এবং মামলার রায় অবশ্যই সরকারের পক্ষে আসবে।
** সাড়ে ১০ কোটি টাকা দিতেই হবে প্রিমিয়ার ব্যাংককে
বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এসজে/এসএইচ/এএসআর