ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খেলাপি ঋণ আদায়ে এগিয়ে রূপালী, পিছিয়ে জনতা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৭
খেলাপি ঋণ আদায়ে এগিয়ে রূপালী, পিছিয়ে জনতা! জনতা ও রূপালী ব্যাংক

ঢাকা: খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও এসব ব্যাংকের মূলধন যোগানে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বারবার মুলধন যোগান দিলেও খেলাপি ঋণ আদায় করতে তেমন উদ্যোগ নেই ব্যাংকগুলোর।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি ব্যাংকগুলো যাকে-তাকে ঋণ দেয়।  এতে স্বাভাবিকভাবেই ঋণ আর আদায় হয় না।

 এভাবে প্রতিবছর ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ বেহাত হয়ে যাচ্ছে।

একারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আদায়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছে সরকার।  সকল ব্যাংককে অনাদায়ী ও খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমকে জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে।  দুর্নীতির মাধ্যমে বেহাত হওয়া অর্থের বিপরীতে জনগণের করের টাকা থেকে মূলধনের জোগান দিচ্ছে সরকার।  জনগণের করের টাকায় প্রতিবছর মূলধন যোগানের যুক্তি ও কারণও তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই না করলে কোনোদিনই খেলাপি ঋণ আদায় হবে না।  আর এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।  কারণ রাজনৈতিক কারণ বিবেচনায় দেওয়া  ঋণই বেশি খেলাপি হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকিং খাতটা খুবই নাজুক।  বলা হচ্ছে, এই  খাতে খামোখা ভর্তুকি দিচ্ছি।  ব্যাংকিং খাতের কোন ধরনের বিপর্যয় সারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।  আমরা ব্যাংকিং খাতে যখনই কোনো অসুবিধা হয়, তখনই পদক্ষেপ নেই।  এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে।  ১৯৪৯ সালে কমরেড ব্যাংককে লাল বাতি জ্বলায়, তখন আমি ছাত্র আমার ২৫০ টাকা ছিল,  সেটা জিরোতে চলে আসে।  যদিও বেশি টাকা না, তারপরেও একজন ছাত্রের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।  আমাদের সৌভাগ্য যে, পরে আর এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা দিলেও কোনো লাভ হয়নি।  মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা।  এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।  ২০১৬ সালের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক।  আর আদায়ের দিক থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে জনতা ব্যাংক।  রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে  আদায়ের হার ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ।  জনতা ব্যাংক ৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার খেলাপির ঋণের মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এবিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুর্যোগকালীন সময়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরও চেষ্টা করছি খেলাপি ঋণ আদায়ের।  ব্যাংকটিতে ভালো অবস্থানে নিতে সব শাখা অটোমোটেড করা হয়েছে।  জুন শেষে আমরা ২০২ কোটি টাকা মুনাফা করেছি।  কোনো ঘোষণা ছাড়াই রূপালী ব্যাংকের শেয়‍ারের দাম বেড়েছে।

ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে যোগোযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  (এমডি) আব্দুস সালাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, অগ্রণী ব্যাংক ৬ হাজার ৮৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।  সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৬২৮ ‍ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।  বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ৮৫৩ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করেছে ১৮ দশমিক ০৩ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনাদায়ী ও খেলাপি ঋণ আদায়ে একমাত্র রূপালী ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের অর্জন সন্তোষজনক নয়।  ঋণ আদায় জোরদার করতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৭

এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।