হলমার্ক গ্রপের মালিক-এমডি তানভীর মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের সঙ্গে ঋণ আদায়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সম্ভব না হলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হলমার্কের ভবিষ্যত নির্ধারণের বিষয়ে সুরাহা চেয়ে কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সর্ম্পকিত কমিটির কাছে সোনালী ব্যাংকের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এই পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
এজন্য সোনালী ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে উদ্যোগ নেবে। প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে ঋণ বিতরণ আইন সংশোধন করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হলমার্ক গ্রুপের কারখানায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিন টাকা আদায় হবে না। আমরা চেষ্টা করছি একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে। যার মাধ্যমে একটি সমাধান আসে।
২০১০ ও ২০১১ সালের বিভিন্ন সময় হলমার্ক গ্রুপ বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন (বর্তমানে ইন্টার কন্টিনেন্টাল) শাখা থেকে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়।
এই ঋণ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর হলমার্কের মালিক-এমডি তানভীর মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ হলমার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকার রমনা থানায় ১১টি মামলা দায়ের করে। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন জেসমিন ইসলাম।
হলমার্কের ভবিষ্যত নির্ধারণের বিষয়ে সুরাহা চেয়ে কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির ২ নম্বর সাব কমিটির কাছে সিদ্ধান্ত চেয়ে আবেদন করেছে সোনালী ব্যাংক। আবেদনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হলমার্ক গ্রুপের কাছে পাওনা টাকা আদায়ের ব্যাপারে সহায়তা চেয়েছে।
ঋণ আদায়ের বিষয়টি সংসদের অনুমিত হিসাব সর্ম্পকিত কমিটির ২ নম্বর সাব কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, হলমার্কের মিলকারখানা-মেশিনারিজ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এই সব কারখানা-মেশিনারিজ স্ক্রাপে পরিণত হলে তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদই নষ্ট হবে। তাই ঋণ আদায়ের বিষয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা সম্ভব না হলে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে কারখানাগুলো চালু উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা এবং ব্যাংকের দায়দেনা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ কিছুদিন আগে বলেছেন, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সাল ব্যাংকের জন্য খারাপ সময় গেছে। ওই সময়ে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটেছে। হলমার্ক গ্রুপের ক্ষেত্রে ঋণের নামে টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। হলমার্কের টাকা আদায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ১৬টি মামলার ডিক্রি আদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, হলমার্কের যে পরিমাণ ঋণ আছে সেই পরিমাণে সম্পদ নেই। তার কাছ থেকে পাওনা আদায়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শর্তসাপেক্ষে হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিকে জামিন দিয়ে কারখানা চালুর সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এটি করতে হলে আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমতি লাগবে। দ্বিতীয়ত, ওই কোম্পানিতে প্রশাসক বসিয়ে কারখানা চালু করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে এই অবস্থায় রাখা যেতে পারে।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, হলমার্কের যে পরিমাণ সম্পদ আছে তা সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করা গেলে ঋণের টাকা তোলা যেতে পারে। এভাবে পড়ে থাকলে কোনো কাজ হবে না। তাই কিছু করার একটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
এসই/আরআই