যার কারণে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের মে মাসে মামলা করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।
আর ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের পরিমাণ সুদসহ বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্রামীণফোন ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৯টি নতুন সিম পরিবর্তনের মাধ্যমে ১ হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়। বাংলালিংক ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুরনো সিম পরিবর্তনের নামে নতুন গ্রাহকের কাছে ৭০ লাখ ২১ হাজার ৮৩৪টি সিম বিক্রয় করে। যার বিপরীতে বাংলালিংক সরকারের ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়। রবি আজিয়াটা ২০০৭ সালের মার্চ থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৭টি নতুন সিম বাজার বিক্রয় করে। নতুন ওই সিমকে পরিবর্তন সিম হিসেবে দেখিয়ে ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়। আর এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড পরিবর্তন সিম বিক্রির মাধ্যমে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়।
কিন্তু এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৫৫ (৩) ধারা অনুসারে গ্রামীণফোন, বাংলাংলিংক, রবি ও এয়ারটেলের কাছে ২০১৫ সালের ১৮ মে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবিনামা জারি করা হয়। তবে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি বলে ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করে। কিন্তু চারটি কোম্পানিই অবশেষে আপিলে হেরে সরকারের কোষাগারে এখন ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের সব অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কেননা আদালতের রায়ে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মোবাইল ফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ফোন কোম্পানিগুলো গ্রাহকের সেবা দেওয়ার মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের ব্যবসা করছে। কিন্তু সরকারের প্রযোজ্য রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই অনিয়ম করছে। এক্ষত্রে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জনবলের অভাবে সব অনিয়ম ধরতে পারছে না এনবিআর। ফলে বছরের পর বছর ধরে ফোন কোম্পানিগুলো কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর একটা অভ্যাস কিছু হলেই হাইকোর্টে যাওয়া কিংবা আপিল করা। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে তাদের বারবার বোঝানো হয় এটা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কিছুই বুঝেতে নারাজ। অন্যদিকে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এযাবত যতো দাবিনামা জারি করা হয়ছে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে তার প্রায় শতভাগই এনবিআরের পক্ষে এসেছে। অথচ দাবিনামা জারি করা হলেই তারা হাইকোর্টে রিট করে। সেখানে হেরে গেলে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে যায়। সেখানে হেরে গেলে আপিল বিভাগে যায়। সেখানে হেরে যাওয়ার পর ফাঁকি দেওয়া অর্থ পরিশোধ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
এসজে/এসএইচ