সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছিলো ৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার মেট্রিক টন।
একইভাবে কুচিয়া উৎপাদনও বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে কুচিয়া উৎপাদন হয়েছিলো ১৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কুচিয়া উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। ফলে বছরের ব্যবধানে কুচিয়া উৎপাদন বেড়েছে ৩ হাজার মেট্রিক টন। কুচিয়া রফতানি করে সর্বশেষে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে ১৯১ কোটি টাকার।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সব মিলিয়ে বছরের ব্যবধানে ৬ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত কাঁকড়া-কুচিয়া বিদেশে রফতানি করা হয়েছে বলে জানায় মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, উদ্যোগ নেয়ার পরে কুচিয়া-কাঁকড়া উৎপাদনে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। বছরের ব্যবধানে অতিরিক্ত ছয় হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া-কুচিয়া বিদেশে রফতানি করেছি। আমাদের দেশের কাঁকড়া-কুচিয়ার চাহিদা বিদেশে ব্যাপকহারে বাড়ছে। শুধু বিদেশে রফতানি নয় দেশেও কাঁকড়া-কুচিয়ার চাহিদা (কনজামশন) বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঁকড়া-কুচিয়া উৎপাদনও বাড়ছে। এই উপলক্ষ্যে আমরা প্রকল্পটি চলমান রাখবো। কাঁকড়া-কুচিয়া উৎপাদন করে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবো। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূলত ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলো ছাড়াও জাপান ও চীনে বাংলাদেশের কাঁকড়ার চাহিদা অনেক বেশি। সে চাহিদার কথা মাথায় রেখে উৎপাদনও কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে বাংলাদেশের কুচিয়ার সুনাম অধিক। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি শুরুর পর থেকে কুচিয়া চাষ ও কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ বিষয়ে মৎস অধিদফতরের ৯০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কুচিয়া মাছ চাষ ও কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ বিষয়ে ৭ হাজার ৩৬০ জন মৎসচাষী ও পুকুর-মালিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
কুচিয়া-কাঁকড়া চাষে ৩৬ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর প্রভাবে প্রতি বছর বিদেশে কাঁকড়া-কুচিয়া রফতানি বাড়ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সাতটি চলমান সরকারি মৎস বীজ খামারে দুই প্রজাতির কুচিয়া ও তিন প্রজাতির কাঁকড়া চাষ ও মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এগুলো প্রদর্শনও করা হবে অচিরেই।
কাঁকড়া-কুচিয়া চাষে ব্যাপক সফলতার পর এর চাষের প্রসারের জন্য জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি চলমান রাখা হবে। প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হলে মৎসচাষী, মৎসজীবী, গরিব এবং ভূমিহীন বেকার মানুষদের সরাসরি উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ১০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাঁকড়া-কুচিয়া চাষের সুফল ভোগ করবেন। এসব মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবেন। উৎপাদন বাড়াতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দশ হাজার জনকে কুচিয়া ও কাঁকড়াচাষী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
কাঁকড়া হ্যাচারী নির্মাণ ও চাহিদা: ১৯৭৭ সালে অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে সর্বপ্রথম কাঁকড়া রফতানি হয়। শুরু থেকে এখনও কাঁকড়ার বড় হাজার চীন। কম্বোডিয়া, জাপান,মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার ও ইউরোপের বহু দেশে সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশের কাঁকড়া। স্থানীয় বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। বড় আকারের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা।
এসব চাহিদা মাথায় রেখে দেশে একটি মানসম্মত কাঁকড়া হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে। কাঁকড়া চাষ বৃদ্ধির জন্য বিদেশি পরামর্শকও নিয়োগ দেয়া হবে। এখাতে বছরে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সরাসরি সমুদ্র উপকূল থেকেই মূলত কাঁকড়া আহরণ করা হয়। এখনও সনাতন পদ্ধতিতে খাঁচার মাধ্যমে কাঁকড়া চাষ করা হয়। বাংলাদেশে এখনও কাঁকড়া চাষের হ্যাচারি গড়ে তোলা হয়নি। ফলে এই এই বিষয়ে এখনও কোনো বিশেষজ্ঞ তৈরি হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন করে কাঁকড়া চাষের সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে।
কুচিয়া হ্যাচারি নির্মাণ ও চাহিদা:
নতুন করে একটি হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে। এর পাশাপাশি ২২টি জেলায় কুচিয়া চাষের প্রদর্শনী করা হবে। এখাতে ৪৬ লাখ টাকা খরচা করবে সরকার। ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বড় আকারের কুচিয়ার জাত আনা হবে।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় কাঁকড়া চাষে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
অন্যদিকে কুচিয়া চাষ বেড়েছে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বরিশাল, খুলনা ও সাতক্ষীরায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০, ২০১৭
এমআইএস/জেএম