এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনটি শিফটে শাহজালাল বিমানবন্দরে ১২ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করছেন কাস্টমস কর্মকর্তা। প্রতি শিফটে একজন উপ-কমিশনার বা সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে থাকছেন ২০ জন কর্মকর্তা।
এছাড়া ১ জন অতিরিক্ত কমিশনার, ৩ জন যুগ্ম- কমিশনার, ৬ জন উপ-কমিশনার, ৬ জন সহকারী কমিশনার, ৬ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১৫০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ৩ জন উচ্চমান সহকারী, ৯ জন সাব ইন্সপেক্টর ও ১০২ জন সিপাহি শাহজালালে কর্মরত থাকার কথা।
কিন্তু বর্তমানে ১ জন যুগ্ম-কমিশনার, ১ জন উপ-কমিশনার, ২ জন সহকারী কমিশনার, ৬ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ৩৬ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ১ জন উচ্চমান সহকারী, ৫ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও ৯ জন সিপাহী দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তিন শিফটে মিলে যেখানে ২৮৬ জন কর্মকর্তা থাকার কথা সেখানে মোট জনবল সংখ্যা মাত্র ৬১ জন। ফলে কর্মকর্তাদের উপর যেমন চাপ তৈরি হচ্ছে, তেমনি সেবার মানও দিন দিন কমছে।
অপরদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫০টিরও অধিক গেট দিয়ে যাত্রী, ক্রু ও স্টাফ গমনাগমন করেন। প্রতিটি গেট বা পয়েন্টে রাজস্ব আহরণ, চোরাচালান প্রতিরোধ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। অথচ বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কাস্টমস হল ও গ্রিন চ্যানেল কেন্দ্রিক দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে দোতলার ডিপারচার গেটের প্রবেশ পথের মোট ৬টি গেট এবং বোর্ডিং ব্রিজের গেটগুলোতে কাস্টমসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেখানে মাত্র ২-৩ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।
আর দোতলার স্টাফ এন্ট্রি গেট, নিচ তলার ২১ নাম্বার গেট, ক্যানপি এরিয়া, রানওয়ে এলাকা, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এরিয়া ও নিচতলার আগমণ গেটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তা স্থায়ীভাবে দায়িত্বরত থাকেন না।
ফলে বিভিন্ন সময় যাত্রীদের চেকিং ও তদারকি করতে গিয়ে বেসামাল হতে হয় কাস্টমসকে। এমনকি বিমানবন্দরের রানওয়েতে অন্যান্য সংস্থার টহল টিম দায়িত্ব পালন করলেও কাস্টমস সেখানে নিয়মিত থাকতে পারে না। এরূপ দুর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন চোরাকারবারী চক্র এবং বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কিছু অসাধু সদস্য কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে না চাইলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এমনকি শ্রম আইনে একটানা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করা যাবে না বলা থাকলেও বিমানবন্দরে কাস্টমসের কর্মকর্তারা শুরু থেকে ১২ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এর বিনিময়ে কর্মকর্তাদের নেই কোনো ওভারটাইম কিংবা আর্থিক সুবিধা। এমনকি নেই কোনো সাপ্তাহিক ছুটিও। বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা কয়েকমাস দায়িত্ব পালন করার পরই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে কাস্টমসের কাঙ্খিত সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া স্বর্ণ পাচার, মুদ্রা পাচারসহ বিভিন্ন চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েকবছরে এসব চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমসের সাফল্যও দৃশ্যমান। ফলে পর্যাপ্ত জনবল থাকলে কাস্টমসের সেবা ও সফলতা আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনার সোহেল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শাহজালালে অর্গানোগ্রাম এর তুলনায় কাস্টমসের জনবল খুবই কম। বর্তমানে দুটি টার্মিনাল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও অধিক যাত্রী আসে ও যায়। কিন্তু যাত্রীদের সেবা দিতে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় যতো জনবল থাকা উচিত তা কাস্টমসের নেই। জনবল বাড়ালে যাত্রীসেবা আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এনবিআরে আগে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা কম ছিলো। ২০০৯ সালে জনবলের সংখ্যা ছিলো ৯ হাজার। যেখানে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী জনবলের সংখ্যা বাড়িয়ে করেছেন ২১ হাজার। আমরা পর্যায় ক্রমে সব স্থানে জনবলের ঘাটতি পূরণ করব। বিশেষ উদ্যোগে আরও ৪শ’ জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই মানুষকে সেবা দিতে।
তিনি বলেন, কাস্টমসে জনবলের ঘাটতি আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জনবল ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়া ২০১৭ অর্থবছরে এনবিআর বর্ধিত জনবল নিয়ে কাজ করবে। যেখানে জনগণ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৭
এসজে/জেডএম