সাম্প্রতিককালে আমদানি পর্যায়ে তথ্য ফাঁকি-অনিয়ম ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে অনেক গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। জব্দের পর আইন অনুসারে নিকটস্থ কাস্টমস্ গুদামে জমা দিতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই বিলাসবহুল গাড়িগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের মতো কোনো শেড বা অবকাঠামো নেই ঢাকা কাস্টমস্ হাউসের। ফলে রাখতে হচ্ছে ভবনের পেছনে মসজিদের পাশে খোলা আকাশের নিচে। সেখানে অযত্ন-অবহেলায় ৪০টির মতো গাড়ি পড়ে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।
ঢাকা কাস্টমস্ হাউসের স্থায়ী শেড বা অবকাঠামোগত পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বাজেট বা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে জব্দ করা অনেক গাড়ির মালিক পরবর্তীতে শুল্ক পরিশোধ করেছেন। তারপরও মামলা জটিলতা শেষ করতে প্রায় বছরখানেক সময় পার হয়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় গাড়িগুলো অনেকটা বিকল হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের বিকল গাড়ি রাষ্ট্রীয় অনূকুলে বাজেয়াপ্ত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র । কেননা, জব্দ করা গাড়িগুলো প্রকৃত মূল্যের ৬০ শতাংশ না হলে নিলামে তোলা যাবে না। ফলে নিলামে তুললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে গত ২২ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল ৬৮টি গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। গাড়িগুলো বিশেষ সুবিধায় আমদানি করার পর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করা এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা কাস্টমস্ হাউসেই রয়েছে ২১টি বিলাসবহুল গাড়ি।
ঢাকা কাস্টমস্ হাউসের যুগ্ম-কমিশনার ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা কাস্টমসের পুরো জায়গাটি হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের। আমাদের গুদামে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আলাদা ভবন ও জায়গার জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হলেও বোর্ড কোনো সাড়া দিচ্ছে না। বরং এনবিআর আমাদের জব্দ করা গাড়িগুলো রাখতে নির্দেশ দিচ্ছে’।
‘শুল্ক গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থা গাড়ি জব্দের পর ঢাকা কাস্টমসে রেখে যায়। এক একটি গাড়ির বিচার কার্যক্রম শেষ করতে ৬ মাস থেকে ১ বছর লেগে যায়। ফলে গাড়িগুলো রোদ, বৃষ্টি ও অযত্নে নষ্ট হয়। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই’।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাস্টমস্ আইনে বলা আছে, যেকোনো পণ্য বা গাড়ি জব্দের পর নিকটস্থ কাস্টমস্ গুদামে দেরি না করে জমা দিতে হয়। সে অনুসারে জব্দের পর ঢাকা কাস্টমস্ হাউসে গাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু কাস্টমসে পাঠানোর পর রোদে ও বৃষ্টিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে গাড়িগুলো’।
এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এসজে/এসএইচ/এএসআর