কাস্টমস আইনের ৮২ ধারায় বলা আছে, বিমানবন্দরে পণ্য নামার ২১ দিনের মধ্যে খালাস করা না হলে ওই পণ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে বা অন্য কোনোভাবে নিষ্পত্তি করতে পারবে। এছাড়া আটক করা এবং বাজেয়াপ্ত পণ্যও নিষ্পত্তি করতে পারবে।
এছাড়া বর্তমানে যেদিন সিগারেট ও মদজাতীয় পণ্য আটক হয়, তার এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যটন করপোরেশনকে দেওয়া হচ্ছে। অতীতে অবস্থা এমন ছিল না। তখন ছিল প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতা। তখন আটককৃত এসব পণ্য বছরে এক বা দুইবার পর্যটন করপোরেশনকে দেওয়া হত। এর ফলে গুদামে পণ্যজট তৈরি হত। পণ্যের মানও নষ্ট হতো।
এবার এসব কাজে গতি এসেছে। এছাড়া পর্যটন করপোরেশনকে দেয়া পণ্যের অর্থ এখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যুক্ত হচ্ছে। আবার বিমানের গুদাম থেকে পণ্য চুরির আশঙ্কাও আগের চেয়ে এখন অনেক কমেছে।
এর আগে বিমানের কার্গোতে নিয়মিত কাস্টমস ইনভেনট্রি হতো না। যার ফলে বিমানের কার্গো থেকে অনেক পণ্য চুরি হতো। বর্তমানে কার্গো গুদামে নিয়মিত ইনভেনট্রি হচ্ছে। ফলে বিমানের গুদামে কি পরিমাণ ধ্বংসযোগ্য বা নিলামযোগ্য পণ্য আছে সেটা জানা যাচ্ছে।
১৫ বছর আগে শাহজালালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মোবাইল ফোনসেট আসে। কিন্তু আইনি জটিলতায় মোবাইল ফোনসেটগুলো আর খালাস হয়নি। এনিয়ে বিটিআরসি’র সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় কাস্টমসের আলোচনাও হয়েছে। অবশেষে চলতি সপ্তাহে বিটিআরসি থেকে মোবাইলগুলো ধ্বংস করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে কাস্টমস এসব মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধ্বংসযোগ্য পণ্য ধ্বংস করবে বলে জানা গেছে।
এর আগে শাহজালালে শক্তিশালী নিলাম সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। তখন সিন্ডিকেটের কারণে বিভিন্ন ঝুঁকি থাকায় নিলামের আয়োজন কম হতো। এমনকি নিলাম আয়োজনের ব্যাপারে কর্মকর্তাদের মধ্যে অনীহা দেখা দিত। বর্তমানে ঢাকা কাস্টমস হাউসের নিলাম কমিটি সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে প্রতি মাসে ধারাবাহিকভাবে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। এছাড়া পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থেকে শুরু করে সরকারি অনেক দপ্তরেই কাস্টমসের নিলাম বক্স সংরক্ষণ করা হয়। সেখানে নিলাম শিডিউল বিক্রি হচ্ছে। ফলে সিন্ডিকেটমুক্ত নিলাম হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে শাহজালালে পণ্যজটও কমতে শুরু করেছে।
কাস্টমস সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালে ঢাকা কাস্টমস হাউসের নিলাম হয়েছে ৩টি,২০১৪ সালে ৫টি,২০১৫ সালে ৩টি,২০১৬ সালে ৯টি এবং চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে নিলাম হয়েছে ৯টি।
এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শাহজালালে বড় আকারের কোনো ধ্বংসযোগ্য পণ্যের চালান ধ্বংস করা হয়নি। একারণে ২০১৬ সালেও বিমানবন্দরে বড় ধরনের পণ্যজট ছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে নিয়মিতভাবে এখন শাহজালালে ধ্বংসযোগ্য পণ্য পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট,পরিবেশ অধিদপ্তর,বিটিআরসি,বিমান,সিভিল এভিয়েশন এবং দুদকের প্রতিনিধি নিয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের ধ্বংস কমিটির আহ্বায়ক,নিলাম কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার পদে আছেন ড.মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সদিচ্ছা,দেশপ্রেম ও আইনানুগভাবে কাজ করলে কোনো কাজই কঠিন নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এনবিআর-এর পদক্ষেপের কারণে ঢাকা কাস্টমস হাউসের নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য নিষ্পত্তিতে নতুন গতি পেয়েছে। এর ফলে শাহজালালে পণ্যজট অনেকাংশে নিরসন হচ্ছে। এভাবে কার্যক্রম চলমান থাকলে আগামী ২ মাসের মধ্যে শাহজালালে কোনো পণ্য জট থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯,২০১৭
এসজে/জেএম