এছাড়া গাড়িটি বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ২ বছরের অধিক পেরিয়ে গেলেও বর্তমান সময় অবধি বেনাপোল কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বেলজিয়ান নাগরিকের টয়োটা ব্র্যান্ডের ২০০৮ মডেলের গাড়িটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
গাড়িটি যখন খালাস করা হয় তখন বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র সাদাকাগজে লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়ে শুল্ককরাদি ছাড়া গাড়িটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ইতোমধ্যে কারনেট ডি প্যাসেজের আওতায় আমদানিকৃত গাড়ি আমদানি, খালাস ও পুনঃরপ্তানি করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আদেশে বলা হয়,যেহেতু বাংলাদেশ ১৯৫৪ সালের কার্নেট সুবিধা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে চুক্তিভুক্ত নয় তাই কাউকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া প্রযোজ্য হবে না। চুক্তিভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও আগে এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। পরে তদন্তে দেখা যায় এই সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। তাই এনবিআর এই সুবিধা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এনবিআর বলছে, এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেনি বিধায় কারনেট এর আওতায় সুবিধা দিতে বাধ্যবাধকতা নেই। সেই হিসেবে বাংলাদেশের কোনো শুল্ক স্টেশন দিয়ে কোনো বিদেশি নাগরিকের আমদানিকৃত গাড়িতে প্রযোজ্য শুল্ককরাদি পরিশোধ ব্যতীত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
এদিকে বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষের যোগসূত্রের মাধ্যমেই বেলজিয়ান নাগরিকের গাড়িটিকে খালাস প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের নথি থেকে জানা যায়, তারা ২০১৫ সালে শুল্ককরাদি পরিশোধ বা ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া ওই বিদেশি নাগরিকের গাড়িটি খালাস প্রদান করে। এছাড়া বেনাপোল কাস্টমসে গাড়িটির আগমনের তথ্য থাকলেও বাংলাদেশ থেকে প্রস্থানের কোনো তথ্য নেই।
জানা গেছে, গাড়িটির ছাড়পত্র গ্রহণের সময় বেলজিয়ান নাগরিক ডেবিত্তে দিদেরিক অঙ্গীকারনামায় লেখেন, আমি বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছি। বাংলাদেশে ৩-৪ সপ্তাহ থাকবো এবং বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করবো। গাড়িটি বিক্রয়ের মতো কোনো চিন্তাভাবনা আমার নেই। কেননা আমি নিয়মিত ভ্রমণ করি।
শুধু তাই নয়, এনবিআরের নির্দশনা অনুযায়ী কারনেট এর আওতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে সব গাড়ি এখনো পুনঃরপ্তানি হয়নি, সেগুলোর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস অবিলম্বে দাবিনামা জারি করে রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। কিন্তু কাস্টমস হাউস বেনাপোল এখন পর্যন্ত গাড়িটির রাজস্ব আদায়ে কোনো ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়নি।
অপরদিকে গাড়িটির সর্বশেষ অবস্থা বা গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ২ মার্চ বিআরটিএ’কে চিঠি দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। কিন্তু বিআরটিএ থেকে জানানো হয়, স্থানীয়ভাবে গাড়িটির কোনো রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়নি কিংবা কোনো প্রকার কাগজপত্র নেই সংস্থাটির কাছে।
শুল্ক গোয়েন্দার সূত্র মতে, গাড়িটি এখনো বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যায়নি। বর্তমানে গাড়িটি থেকে আদায়যোগ্য রাজস্ব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। একই সাথে রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়িটি দেশের অভ্যন্তরে অবাধে চলাচলের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য বিধি বহির্ভূভাবে বেনোপোল কাস্টমস থেকে গাড়িটি খালাস হওয়ায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর সম্প্রতি বার্তা পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের কাছে মতামত জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী গাড়িটি দেশেই আছে। এটি আটকের সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.নজিবুর রহমান বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। বিষয়টিতে বেনাপোল কাস্টমের কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এসজে/আরআই