ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইকুরিয়ারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
ইকুরিয়ারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ইকুরিয়ারের লোগো

ঢাকা: ফেসবুকে একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা রায়হান। পণ্যে আগ্রহ দেখিয়ে বিজ্ঞাপনদাতাকে জানান, তিনি দু’দিন পরই দেশের বাইরে চলে যাবেন, সুতরাং পণ্যটি শিগগির পাঠানোর উপায় থাকলে তিনি কিনতে আগ্রহী।

বিজ্ঞাপনদাতা খোঁজ নিয়ে জানলেন, অনলাইনভিত্তিক কুরিয়ার সার্ভিস ‘ইকুরিয়ার’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় পণ্য পৌঁছে দেয় গ্রাহকের কাছে। দেশের যেকোনো স্থানে পণ্য পৌঁছাতে তাদের সময় লাগে ৭২ ঘণ্টা।

 

তিনিও আগ্রহী রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বললেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে পণ্য। সুতরাং রায়হান চূড়ান্ত অর্ডার করলে ওই বিজ্ঞাপনদাতা ইকুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্যটি পাঠাতে প্লাটফর্মটির দ্বারস্থ হন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে ৪৮ ঘণ্টা এমনকি ৬০ ঘণ্টা গড়িয়ে যায়, ইকুরিয়ার পৌঁছাতে পারে না পণ্য। অর্ডারের তিন দিনের মাথায় ইকুরিয়ার তার বাসায় পণ্য দিতে যায়। কিন্তু ততক্ষণে রায়হান দেশ ছেড়ে চলে যান। দফায় দফায় যোগাযোগের পর আরও তিন দিন পণ্যটিকে ঘুরিয়ে সেটি বিজ্ঞাপনদাতার কাছে পাঠায় ইকুরিয়ার।

চমকপ্রদ স্লোগান দিয়ে বাজারে আসা ইকুরিয়ারের এমন অবহেলা-অব্যবস্থাপনায় ভুক্তভোগী বিজ্ঞাপণদাতার নাম আবুল হাসনাত মো. মোস্তফা কামাল। এমন আরও বেশ কিছু অভিযোগ তিনি দিয়েছেন বাংলানিউজে। সব ক’টি অভিযোগের স্বপক্ষে তিনি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নথিও।

যোগাযোগ করলে আবুল হাসনাত মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, চীন থেকে কয়েকটি ‘সেলফি ড্রোন’ এনেছিলাম। এর মধ্যে দু’টি সেলফি ড্রোন বিক্রির জন্য একটি ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিই। সেখানে বিজ্ঞাপনটি দেখে যোগাযোগ করেন রায়হান।

দ্রুত তার কাছে পণ্যটি পৌঁছাতে ইকুরিয়ারের সার্ভিস নিতে আগ্রহী হই। তাদের ওয়েবসাইটে (http://www.ecourier.com.bd/) যাওয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে পণ্য বিক্রি করতে চাই বলে ইন্ডিভিজুয়াল রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। তারা তখন জানান, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকার যেকোনো প্রান্তে পণ্য পৌঁছে দেবেন তারা।

মোস্তফা কামাল দীর্ঘসূত্রিতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, যোগাযোগের পর ৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইকুরিয়ারের পক্ষ থেকে তাদের কর্মীরা এসে পণ্যটি নিয়ে যান। আমি তখন বাসায় ছিলাম না, আমার স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু ৫ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য নিলেও তখন কোনো কাগজপত্র দিয়ে যায়নি। কেবল দুইটা কাগজের ওপর তারিখ বসিয়ে সই করে যায়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে বিষয়টি জেনে ৮ জুলাই সকালে তাদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে পণ্য গ্রহণের কাগজপত্রের ব্যাপারে কথা বললে তারা সার্ভিস নম্বর বা ইসিআর নম্বর ইমেইল করেন। তখন আমি তাদের জানাই যে গ্রাহককে শিগগির পণ্য দিতে না পারলে তিনি পরের দিন দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু তারা অর্ডারদাতা রায়হানের বাসায় যায় তিন দিনের মাথায় ৯ জুলাই, ততক্ষণে রায়হান ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। কয়েক দফায় ফোন করার পর আরও ৩ দিন ঘুরিয়ে তারা সেই পণ্য ফেরত দিয়েছে আমাকে। ’

মোস্তফা কামাল জানান, তিনি চট্টগ্রামের ফরহাদ মনোয়ার জিতু নামে এক গ্রাহককেও তার একটি পণ্য পাঠিয়েছেন ওই ৭ জুলাই। ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ৩ দিনের মাথায় পণ্যটি জিতুর কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও গেছে চারদিনের মাথায় ১১ জুলাই।  

৫ হাজার টাকা মূল্যের এই পণ্যটি তবু গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারলেও ইকুরিয়ার এখন মোস্তফা কামালকে তার গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ পরিশোধ করছে না। ১১ দিন গড়িয়ে শনিবার (২২ জুলাই) সকালে যোগাযোগ করেও তাদের পাচ্ছেন না মোস্তফা কামাল।

মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি কয়েক দফায় তাদের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেছি। একবার আমাকে বলেছে, বিকাশ নম্বর দেন, টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আবার বলেছে আপনার সঙ্গে অ্যাকাউন্টস বিভাগ যোগাযোগ করবে। আজ সকাল থেকে ট্রাই করেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইকুরিয়ারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (সার্ভিস) তাহমিনা আফরিন বাংলানিউজের কাছে অভিযোগকারী গ্রাহকের নম্বর চান। এরপর বলেন, এগুলো ইন্ডিভিজুয়াল অর্ডার ছিল। তাদেরকে আপনার নম্বর দিয়ে দিচ্ছি। তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

কিন্তু দুপুর দেড়টার আগে আলাপ করলেও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত ইকুরিয়ারের ইন্ডিভিজুয়াল ডিপার্টমেন্টের কেউ যোগাযোগ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।