ব্যক্তি’র বাইরে প্রতিষ্ঠানের নামে সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম না থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে বিশেষ জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে বাজারে ছাড়া কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কুক্ষিগত করেছে এসব কোম্পানি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাবে, সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি সাতটি ব্যাংক, একটি এনজিওসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে প্রায় দু’শ’ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠানের ১৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে মোট লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। তবে বিষয়টি ধরা পড়ায় উত্তোলনের সময় বড় অংকের মুনাফা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতটি ব্যাংক কিনেছে ৭৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। যার মুনাফার পরিমাণ ৪১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র কিনেছে বিদেশিখাতের এইচএসবিসি ব্যাংক। যার পরিমাণ ২৫ কোটি ৯০ লাখ। সবচেয়ে কম কেনে দেশী এবি ব্যাংক। যার আর্থিক মূল্য দুই কোটি টাকা।
এছাড়াও ইস্টার্ন ব্যাংক ১৮ কোটি ৩০ লাখ, পুবালী ব্যাংক ৮ কোটি, সিটি ব্যাংক এনএ ২ কোটি ৯৮ লাখ, ব্যাংক এশিয়া ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ খাতে বিনিয়োগ করেছে ৫০ কোটি টাকা। পিপলস সিরামিকস ৪ কোটি ২০ কোটি লাখ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস ১ কোটি ৯০ লাখ, আশা এনজিও ৪ কোটি ২৭ লাখ, ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ৩০ লাখ, নোকিয়া ১৯ লাখ ২০ হাজার, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৩০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। সব মিলিয়ে এ খাতে মোট বিনিয়োগ একশ ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। মুনাফার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
নারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার লক্ষ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর।
এছাড়া জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরণ, জাতীয় বাজেট-ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির অর্থ।
ব্যাংক আমানতে সুদহার কমে যাওয়া ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা সংসার চালাতে পেনশনের পুরো টাকা বিনিয়োগ করে সঞ্চয়পত্রে। সঞ্চয়পত্রের জন্য সাধারণ মানুষ ব্যাংকগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পোস্ট অফিসে বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের বেশ চাহিদাও রয়েছে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিনই বহু মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনতে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস ভিড় করছে।
বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, দু’শ’ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের কাছে থাকলে গড়ে আরো ৫০০ মানুষের কাছে বিক্রি করা যেত। কারণ উপকারভোগীরা ১ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী রেজা ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দেখি তারা কি করেন।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আইন অমান্য করে সঞ্চয়পত্র কেনায় মুনাফা আটকে দেওয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭/আপডেট ১০৩০ ঘণ্টা
এসই/জেএম/জেডএম