অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই অর্থ কমেছে ৭৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ৪৩৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ কমে গেলেও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাঙ্ক্ষিত আয় করতে না পারায় বাজেট বাস্তবায়নে বৈদেশিক নির্ভরতা বাড়ছে সরকারের। বৈদিশিক অর্থের ব্যবহার করতে হবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক প্রকল্পে। না হলে দেনা ও সুদ পরিশোধ গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলে, বৈদশিক ঋণ বাস্তবায়নে যত দেরি হবে খরচ তত বাড়তে থাকবে। সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারে আগে যা করা যেত এখন তার চেয়ে কম করতে পারবো। সেই জায়গা থেকে সাশ্রয়ীভাবে সময় মতো বাস্তবায়ন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য মতে, গেল অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৪৩৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৫৬ দশমিক ৩৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৭৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার কম। কমে যাচ্ছে অনুদান সহায়তাও। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার সহায়তা পেলেও ২০১৬-১৭ ৩৩ অর্থবছরে মিলেছে ৩৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশকে সুদ ও আসলে পরিশোধ করতে হয়েছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল ৯১ দশমিক ৩৩ কোটি ডলার। সুদ ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে এবার বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৬৫০ কোটি ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, প্রতিশ্রুতির চেয়ে ছাড় সব সময় কম হবে। বাৎসরিক যে প্রতিশ্রুতি সেটার পূর্ণ ব্যবহার আমরা সব সময় করে উঠতে পারছি না। এজন্য আমাদের জনবল দক্ষতা এবং বিদেশি ঋণ প্রয়োগের কারিগরি দক্ষতা অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই সেটাতে আমাদের ঘাটতি আছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, একদিকে নিজস্ব অর্থের সংস্থান করার চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি বাজেট মেটানোর কারণে দায় বাড়ছে সরকারের। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় না বাড়লে দেনা পরিশোধের মাত্রা আরও অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সাম্প্রতিককালে বৈদেশিক ঋণ বেশি আসছে। এসব ঋণের ব্যবহার করা সহজ হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা কখনোই কাম্য না। এই ঋণের সুদহার বেশি। কারণ মেয়াদ কম হওয়ায় সুদ বেশি দিতে হচ্ছে। এসব ঋণের মেয়াদ না বাড়ালে সুদ বাড়তেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের যাত্রায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনের তাগিদেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নিতে হবে। একই সঙ্গে বাড়াতে হবে বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা, রাখতে হবে ঋণের স্বাভাবিক প্রবাহও।
সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়লেও কমেনি বৈদিশিক ঋণের নির্ভরতা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য বৈদেশিক সহায়তার ওপর ভরসা করতে হচ্ছে সরকারকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এসই/এমজেএফ