প্রতিনিয়ত কয়েনের লেনদেন নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ছে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণ। রংপুরে কয়েনের এই জটিলতা দীর্ঘদিনের হলেও প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।
রংপুরে কয়েন দিয়ে লেনদেনে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কয়েনের বদলে কাগুজে নোট ব্যবহারে তাদের আগ্রহ বেশি। অনেকে বলছেন, পকেটে বা টাকা রাখার ব্যাগে কয়েন রাখতে সমস্যা হয় বলেই আগ্রহ কমেছে। মাঝারি ব্যবসায়ীদের দাবি তাদের কাছে কয়েনের পাহাড় জমেছে। তাই তারা কয়েন নিতে চান না। আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন কয়েন খরায় ভুগছে। পণ্য কেনাকাটা শেষে গ্রাহক ১ টাকা ফেরত পেলে ক্ষুদ্র দোকানি তাকে টাকা না দিয়ে চকলেট ধরিয়ে দিচ্ছেন।
কয়েন নিয়ে দুর্ভোগে পড়ার কথা জানালেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা। তাঁর অভিযোগ, প্রায় সময়ই রিকশাচালকেরা ভাড়া হিসেবে কয়েন নিতে চান না। এ জন্য প্রায়ই খুচরা ভাড়া নিয়ে ঝগড়া লেগে যায়। অনেকেই কয়েন নিতে চায় না। আবার ব্যাগে রাখতেও ঝামেলা। এখন তাই আমিও লেনদেনের সময় কয়েন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।
সাধারণত অল্পমূল্যের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে কয়েনের লেনদেন হয়ে থাকে। লেনদেনে কয়েন বেশি চলে চা ও পান-সিগারেটের দোকানে। নগরীর সিটি বাজারের চায়ের দোকানদার আমিনুল ইসলাম বলেন, ছোট ব্যবসা হওয়ায় তাঁদের বেশি কয়েন জমে না। যা জমে, সেগুলো ক্রেতাদেরই আবার ফেরত দেই। কিন্তু পাইকারি বিক্রেতা বা মহাজনদের কাছে কয়েন দিয়ে পণ্য কেনা কঠিন।
সিটি বাজারে মুদি দোকান চালান আল আমীন। তিনি বলেন, গত এক মাসে কয়েক হাজার টাকার কয়েন জমেছে। কিন্তু একদিকে যেমন খদ্দের নিতে চায় না, অন্যদিকে কয়েনের বদলে কাগুজে নোট দিতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও অনীহা আছে।
কথা হয় নুরা ট্রেড লিংকস এর ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার শ্যামল বণিকের সাথে। তিনি বলেন, আমার অধীনে ৫ জন সেলসম্যান কাজ করে। প্রতি জন গড়ে প্রতিদিন ৭’শ টাকার কয়েন জমা করে। ৫ জনের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫শ টাকার কয়েন নিতে হয়। এভাবে প্রতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকার কয়েন জমে যায়। কিন্তু এই কয়েনগুলো দেয়ার জায়গা থাকে না। বাধ্য হয়ে কয়েন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকদের কাছে এসব কয়েন বিক্রি করতে হয়। তারা ১শ’ টাকার কয়েনের মূল্য হিসেবে ৮০-৮৫ টাকার কাগজের নোট দেয়। এতে এক লাখ টাকার কয়েন বিক্রি করতে হয় ৯৪ হাজার টাকায়। ফলে প্রতি লাখেই লোকসান হয় ৪ হাজার টাকা।
শ্যামল বণিক বলেন, এক লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি করে যেখানে চার হাজার টাকা লাভ হয় না সেখানে এক লক্ষ টাকার কয়েন বিক্রি করে চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে রংপুর পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম জাকারিয়া পিন্টু বলেন, রংপুরে কয়েনের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কারণ এই কয়েনগুলো রংপুরের বাইরে যায় না। ফলে কয়েন জটিলতা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কয়েন গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সেই কয়েনগুলো কেন্দ্রীয়করণ না করে অন্য ব্যাংকগুলোকে চাপিয়ে দেয়া হয়। ফলে অন্য ব্যাংকগুলো সেই কয়েনগুলো গ্রাহকদের মাঝে ভাগ করে দেয়। গ্রাহকদের মাধ্যমে সেগুলো আবার বাজারে আসে।
জানতে চাইলে সাউথ ইস্ট ব্যাংক এর রংপুর শাখা ম্যানেজার মিজানুর রশিদ জানান, ব্যাংক ধাতব মুদ্রা নেয় না এ অভিযোগটি সঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই আমরা ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করে থাকি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার ব্যাংকে ৩০ হাজার ধাতব মুদ্রা থাকার কথা কিন্তু আছে প্রায় ১ লাখ ধাতব মুদ্রা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক, রংপুর শাখার ভাইস প্রেসিডেন্টও শাখা প্রধান এমডি হযরত আলী জানান, আমরা উভয় সংকটে আছি। গ্রাহক যখন টাকা দিতে আসে তখন ১ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা যখন তাদেরকে ধাতব মুদ্রা দিতে চাই তখন তারা নিতে চায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক জানান, তার ব্যাংকের ভল্টে যতটুকু জায়গায় ধাতব মুদ্রা মজুদ আছে সেই জায়গায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা মজুদ রাখা যেত। সুতরাং কয়েনের মুদ্রা নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
আরআই