কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাড়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ক্রমশ বাংলাদেশি সবজি, ফল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। এ সত্ত্বেও প্যাকিং সেন্টারের সক্ষমতা না থাকায় সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সব্জি ও ফল রফতানিতে বড় সমস্যা হলো প্যাকিং সেন্টারে অভাব। আমাদের সেন্ট্রাল প্যাকিং সেন্টার চাহিদা মেটাতে পারে না। তার ওপর আছে কার্গো সংকট। তাই আমি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এখাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ প্রতিবেশী কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করায় সেখানে ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ফল ও সবজি রফতানিতে। কিন্তু প্যাকিং সেন্টারের সক্ষমতার অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তারপরও সেখানে ৫০০ কেজির পরিবর্তে প্রতিদিন এক একজন্ ব্যবসায়ী এক হাজার কেজি করে পণ্য নিচ্ছেন। অথচ ব্যবসায়ীপ্রতি চাহিদা আছে ১০ টন করে পণ্যের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সূত্র জানায়, বিদেশে সবজি রপ্তানিতে খাদ্যনিরাপত্তা ও গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে একটি সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ (কেন্দ্রীয় মোড়কজাতকরণ ঘর) নির্মাণ করেছে সরকার। চলতি বছরেরই জানুয়ারিতে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ইউরোপীয় দেশগুলোতে রপ্তানিকৃত সবজির চালানে কীট ও জীবাণুর উপস্থিতি এবং ভুয়া রপ্তানি ছাড়পত্র ব্যবহারের ঘটনা বারবার ধরা পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটি নির্মাণ করা হয়।
এর আগে ২০১১ এবং ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ২৭০টি চালানে ক্ষতিকর কীট ও জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ)। এরপর বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত পানের চালানে ব্যাক্টেরিয়াগত দূষণ ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ থেকে পান আমদানি নিষিদ্ধ করে ইইউ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর শ্যামপুরে উল্লিখিত কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই প্যাকিং হাউজে আন্তর্জাতিক মানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে বাছাই, পরিষ্কারকরণ ও পরিদর্শন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোড়কজাতকরণের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা তাজা শাক-সবজি ও ফল-ফলাদি বিদেশে রফতানির ছাড়পত্র দেয়া হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের ফল ও শাক-সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে চাহিদা মোতাবেক এসব রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। রফতানির আগে শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের পর্যাপ্ত প্ল্যান্ট বাংলাদেশে নেই। এখাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারিরা বিনিয়োগ করলে রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
প্রসঙ্গ কাতার: কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ সম্পর্ক বন্ধুত্বের। কাতারে কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। সেখানে আরো জনশক্তি রফতানির সুযোগ রয়েছে। কাতারে বাংলাদেশের শাক সবজিসহ বেশ কিছু পণ্য রফতানি হয়। বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য কাতার থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন হবে, তখন আর দেশে গ্যাসের কোনো সংকট থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ দেশের কল-কারখানায় প্রয়োজনীয় গ্যাস সংযোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাতারের সাথে জনশক্তি রফতানি বাদে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য খুব বেশি নয়। গতবছর বাংলাদেশ থেকে কাতারে ২৬ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। একই সময় সেখান থেকে ১৫২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, কাতার বিশ্বে বৃহৎ এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ। কাতার বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন এলএনজি রফতানি করে থাকে। ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হলে বাংলাদেশের কল-কারখায় গ্যাসের সমস্যা আর থাকবে না।
তিনি বলেন, কাতারে আরো জনশক্তি রফতানির সুযোগ রয়েছে। সেখানে সুনামের সাথে বাংলাদেশিরা কাজ করে যাচ্ছে। কাতারে বাংলাদেশের শাক-সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে চাহিদা মোতাবেক এগুলো রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। রফতানির আগে শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের পর্যাপ্ত প্ল্যান্ট বাংলাদেশে নেই। এখাতে কাতার বিনিয়োগ করলে রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কাতারের বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসতে পারেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, কাতারে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের সংখ্যা খুবই কম। সেখানে ঔষধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, আইটি প্রোডাক্ট, হিমায়িত মাছ, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যসুবিধা বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে কাতারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়:২০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
আরএম/জেএম