ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঢাকাবাসীর মুক্তির লাস্ট ডেস্টিনেশন ‘সাবওয়ে’!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
ঢাকাবাসীর মুক্তির লাস্ট ডেস্টিনেশন ‘সাবওয়ে’! ঢাকাবাসীর জন্য সাবওয়ের ম্যাপ

ঢাকা: প্রতিদিন যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর মুক্তির একমাত্র ডেস্টিনেশন ‘সাবওয়ে’। সাবওয়ে ছাড়া অপরিকল্পিত ‘ঢাকা’র আর কোনো উপায় নেই বলেও বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এজন্য সাবওয়েকে বর্তমান সরকারের একটি স্বাপ্নিক প্রকল্প হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

পুরো ঢাকাকে নতুন করে সমীক্ষার আওতায় এনে পুনরায় ‘ফিজিবিলিটি টেস্ট’ পরিচালনারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমীক্ষা শেষ হবে বলে জানান মন্ত্রী।

বাংলানিউজকে মন্ত্রী বলেন, সাবওয়ের ‘ফিজিবিলিটি’ টেস্ট হবে সারা ঢাকা শহরে। এছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। এ প্রকল্প ঢাকার যানজট নিরসনের ‘লাস্ট ডেস্টিনেশন’।  

কামাল বলেন, আমরা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) করছি। কিন্তু মেট্রোরেল দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি করা গেলেও সেটা চূড়ান্ত সমাধান নয়। বর্তমানে এমআরটি-৬ (উত্তরা-পল্লবী-আগারগাঁও-ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহাবাগ-দোয়েল চত্বর-প্রেসক্লাব-মতিঝিল) এর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে পর্যায়ক্রমে আরও চারটি মেট্রোরেল রুট বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে দু’টির সমীক্ষাসহ প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চারটি মেট্রোরেল রুটের মধ্যে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর দিয়ে কমলাপুর হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত এমআরটি-১ নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি আশুলিয়া-সাভার-গাবতলী-ঢাবি-নগর ভবন-কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-২, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এমআরটি-৪ এবং গাবতলী-মিরপুর-গুলশান-ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি-৫ নামে একটি রিং মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। রুটটি পর্যায়ক্রমে এ রুটটি নিয়ে যাওয়া হবে পূর্বাচল নতুন শহর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল দিয়ে হয়তো ২০৩০ সাল পর্যন্ত সহনশীল মাত্রায় নামিয়ে আনা যাবে। মানুষের জীবনে গতি ফেরানো যাবে। কিন্তু ঢাকাবাসীকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে প্রয়োজন হবে সাবওয়ে। সাবওয়ে বাস্তবায়ন হলে র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট, এমআরটি (মেট্রো) মিলে একটি সমন্বিত পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এতে ঢাকাবাসী সারাজীবনের মতো যানজট থেকে মুক্তি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও নির্দেশনায় ‘সাবওয়ে’ যুগে প্রবেশের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৬ সালের এপ্রিলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়া ‘রাজধানীতে ৪টি সাবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা’ আলোচনার জন্য একনেক বৈঠকে।

পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেক সভায় আসা ওই প্রকল্পে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে দু’টি সাবওয়ে নির্মাণ করতে চায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। টঙ্গী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এবং আমিনবাজার থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের এ দু’টি সাবওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে সময় বলেছিলেন, এতে ব্যয় হবে ৮.১৪ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে সেতু ভবনে সাবওয়ে নির্মাণের বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ নিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবওয়ের পরিকল্পনা উপস্থাপন করে সেতু বিভাগ। প্রকৌশলী ড. হোসাইন মো. শাহীন চারটি সাবওয়ে রুটের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ সময় সাবওয়ে পরিকল্পনা নিয়ে মতামত তুলে ধরেন শীর্ষস্থানীয় নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা।

চারটি রুটের মধ্যে প্রথম রুটটি টঙ্গী-বিমানবন্দর-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-মতিঝিল শাপলা চত্বর-সায়েদাবাদ-সাইনবোর্ড। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সাবওয়ের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যতে এ লাইনটি নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যাবে। দ্বিতীয় রুটটি আমিনবাজার-গাবতলী-শ্যামলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক-সায়েদাবাদ। মোট দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার ও সম্ভাব্য ব্যয় ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে এ দু’টি সাবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো।

অন্যদিকে রুট-৩ ধরা হয়, গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কাকলী-গুলশান-২-নতুনবাজার-রামপুরা টিভি ভবন-খিলক্ষেত-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল-কেরানীগঞ্জ-ঝিলমিল ও রুট-৪ ধরা হয় রামপুরা টিভি ভবন-নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমণ্ডি-২৭, রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ-সদরঘাট।

সাবওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়ে সেতু বিভাগ বলেছে, ঢাকা শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য রয়েছে ১২৮৬ কিলোমিটার। সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। অথচ আদর্শমান হচ্ছে ২০-২৫ শতাংশ সড়কের ঘনত্ব। ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, কিন্তু থাকার প্রয়োজন ১৫-২০ শতাংশ। সড়কের বর্তমান সক্ষমতা ৩ লাখ হলেও বিআরটিএর নিবন্ধিত গাড়ির প্রায় ৯ লাখ। ঢাকা শহরে সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে একই পরিমাণ বাসে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল সম্ভব। মাটির নিচে সাবওয়ে নির্মাণ হলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে। ফলে ভূমির ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে এবং যানজট হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।