ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টিকফা থেকে হারিয়ে গেছে জিএসপি ইস্যু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
টিকফা থেকে হারিয়ে গেছে জিএসপি ইস্যু

ঢাকা: যেই জিএসপি ইস্যুই ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পাদিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা)  প্রথম তিনটি বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা। এখন সেটিই হারিয়ে গেছে। দু’বছর আগেও বলা হতো, ‘জিএসপি না পেলে টিকফা অর্থহীন’।

সেই টিকফার চতুর্থ বৈঠক আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে জিএসপি নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানা গেছে।

মূলত টিকফার তৃতীয় বৈঠক থেকেই বিতাড়িত হয়েছে এই ইস্যু। গত বছর ১৭ মে ঢাকায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন>>
** 
যুক্তরাষ্ট্রে কমছে রফতানি, বাড়ছে আমদানি

বৈঠকের আগ পর্যন্ত বলা হচ্ছিলো, জিএসপিই প্রধান ইস্যু। কিন্তু বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব সুবাশীষ বসু জানালেন, জিএসপি নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনাই হয়নি। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সুবিধাই বাংলাদেশের অন্যতম স্বার্থ বলে এখনও মনে করে ব্যবসায়ী সমাজ।

২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পেয়ে এসেছে। তবে এরমধ্যে পোশাক ছিল না। এজন্য জিএসপি সুবিধা নিয়ে রফতানির পরিমাণ সামান্যই ছিলো। কিন্তু ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের দুই মাসের মাথায় ২৮ জুন জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ উন্নত করতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১৬টি শর্ত।

এর এক বছর পরে ২০১৪ সালে টিকফার প্রথম বৈঠকে জিএসপিই ছিল আলোচনার প্রথম বিষয়। এরপর ২০১৫ সালের দ্বিতীয় বৈঠকেও প্রাধান্য পায় জিএসপি। এ দু’টি বৈঠকেই বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালেই জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যানের সব শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ। ওই বছরই বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জিএসপি না পেলে টিকফা অর্থহীন হয়ে যাবে।

এরপর গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় বাণিজ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তখন বলেছিলেন, কেয়ামত পর্যন্ত কাজ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত শেষ হবে না। তারা একের পর এক শর্ত দিয়েই যাবে। পরে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, আমরা আর জিএসপি চাইবো না।

গত ফেব্রুয়ারিতেও সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার আশা করে না বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ যতো শর্ত পূরণ করুক তারা দেবে না। তাদের জিএসপি আমাদের প্রয়োজন নেই। সারা পৃথিবীতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন বাজার সুবিধা চাওয়ার পরিবর্তে নিজেদের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে বড় বিনিয়োগ চায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এছাড়া পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ডব্লিউটিও ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বৃহৎ অর্থনীতির দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আতিউর রহমান বলেন, আমি মনে করি, এবার টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের দর কষাকষির ক্ষমতা অনেক বেশি থাকবে। জিএসপির সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করেছে। জিএসপি না পেলেও বাংলাদেশ যেন অন্যান্য ইস্যুতে ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে, সেই প্রত্যাশাই করছি।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তের অনেক বেশি পূরণ করেছি। বাংলাদেশে ৭২টি গ্রিন কারখানা আছে। এর অর্ধেক আছে এমন দেশ বিশ্বে আর একটি নেই। এই অবস্থায় জিএসপি আর চাইতে হবে কেন? যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব জিএসপিসহ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়া।

বাজার সুবিধা না পেলেও প্রতিযোগিতা করে বাজার দখলে রাখার সক্ষমতা বাংলাদেশের হয়েছে বলেও তিনি মনে করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এজেড/ইএআর/আরবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।