শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর-১ পাইকারি, মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও ও বউবাজার এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা ও পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ২৫ টাকা।
এদিকে দাম বেড়েছে কাঁচকলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির। প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে পাঁচ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়ে কাঁচকলা হালি প্রতি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও একেকটি লাউ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, চাল কুমড়া ৩০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি কলমি শাক ও লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা করে, লাউ শাক ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, পালং শাক ও পুঁই শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দামের ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। এক্ষেত্রে ক্রেতা বুঝে দাম হাঁকানোর প্রবণতা প্রবল আকারে দেখা গেছে খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে। যেমন মিরপুরের বউবাজার, আগারগাঁও এলাকার কাঁচা বাজারগুলোতে যে দাম দেখা গেছে তার তুলনায় মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া এলাকায় প্রতিটি সবজিতে কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি দেখা গেছে। ফলে আক্ষেপ নিয়েই ক্রেতারা বাজার করছে।
শেওড়াপাড়া এলাকায় বাজার করতে আসা বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত তৌহিদ অভি বাংলানিউজকে জানান, সবজির বাজারে দাম কমার শুধুমাত্র আশ্বাস পেয়েছি। মাঝে অল্প কিছু দাম কমলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। যেসব সবজি বিক্রি কম হয় শুধুমাত্র সেগুলোর দাম কমে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শেওড়াপাড়া এলাকার খুচরা সবজি বিক্রেতা রফিক বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরে গেছে। পাইকারি বাজারে দাম কমেছে। কিন্তু পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর খুচরা বাজারে আনার খরচ ও বাজার থেকে বের হওয়ার সময় চাঁদার অঙ্ক বেড়ে গেছে। তাই দাম কমছে না।
এদিকে, আলু কেজি প্রতি ১৮ টাকায়, আদা ১০০ টাকায়, ভারতীয় রসুন ৭৫ টাকায়, দেশি রসুন ৪০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ২৫ টাকায় ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা পাইকারি বাজারের চেয়ে গড়ে প্রায় ১৫ টাকা করে বেশি।
চলতি মাসের শুরুতে মিনিকেট চালের দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা করে বাড়ার পর গত সপ্তাহে এক টাকা ৩০ পয়সা কমেছিল। এ সপ্তাহে চালের দাম আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি সিরাজ মিনিকেট ও মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া কেজিতে স্বর্ণ চাল ৪২ টাকা, মোটা চাল ৪০ টাকা, সাকি-২৮ চালের দাম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বাড়েনি আমিন-২৮-এর দাম। ৪০ থেকে ৪৮ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি মসুর ডাল (দেশি) ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত সপ্তাহে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু মসুর ডাল মোটাটা কেজি প্রতি দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবার ভোজ্যতেল (সয়াবিন) প্রতি লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে খোলা ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় ও বোতলজাত ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সম্পূর্ণ দোষ চালের পাইকারি বিক্রেতাদের ওপরে চাপিয়ে রুবেল নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, চালের দাম অনেক দিন স্থিতিশীল ছিল। এ মাসের শুরু থেকে দাম বেড়েছে। আগে যে দামে কিনেছি তার থেকে অনেক বেশি দামে এখন চালের বস্তা কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা আবার বলে ডিলাররা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের জানা মতে পাইকারি বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করেই চালের দাম বাড়াচ্ছে।
এদিকে, মাছের বাজারে প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোড়া ১০০০ থেকে ১১৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি জোড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দামের হিসাবে মাছের দাম ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে মাছের দাম কমেছিল। তারপর আবার এ সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কেজিতে বেড়েছে। আকার ভেদে প্রতি কেজি ট্যাংরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা, হরিণা ও বাগদা চিংড়ি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চাষের কৈ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি কৈ ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাঁচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বরফ দেওয়া রুই ২৫০, তাজা রুই ৩০০ থেকে ৩৫০, তাজা কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ ও বরফ দেওয়া কাতল ২৫০ টাকা, বাইন মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে এসে বাড়তি দাম দেখে বিরক্ত হয়ে ফিরে গেছেন অনেককেই। ইমন নামে তেমনই এক ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, মাছ কিনতে এসেছিলাম, কিন্তু দামের কারণে কেনার ইচ্ছে চলে গেছে। এখন মাংস কিনে বাসায় ফিরবো। দাম কেন বাড়ানো হচ্ছে সে ব্যাপারে সঠিক কোনো বক্তব্য কারো কাছে পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারাও পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে বলে দায় এড়িয়ে যায়।
তবে মাংসের দাম একই আছে কোনো কোনো স্থানে কেজিতে উল্লেখিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম দামে বিক্রি করেতে দেখা গেছে। তবে দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমএএম/এসআই