ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোম্পানির প্রলোভনে তামাকে ঝুঁকছেন চাষিরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
কোম্পানির প্রলোভনে তামাকে ঝুঁকছেন চাষিরা! তামাক চাষে ঝুঁকছেন মানিকগঞ্জের চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: পাতা সংগ্রহকারী নানা কোম্পানির প্রলোভনে তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিরা।ক্ষতিকর জেনেও অগ্রিম টাকা পাওয়া, ফসল বিক্রির নিশ্চিয়তার কারণেই গ্রামের চাষিরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও ঘিওর উপজেলায় তামাকের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।

তামাক চাষের জমি তৈরির সময় থেকে বিক্রি পর্যন্ত দেখাভাল করেন বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রান্তিক পর্যায়ে তামাক চাষে নানা রকমের প্রণোদনার কথা বলে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করান কোম্পানি নিযুক্ত কর্মীরা।  

সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ এলাকার হুমায়ন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে তামাক চাষ করেছেন তিনি। জমি তৈরি, চারা রোপন, সার ও কিটনাশক মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার তামাক পাতা বিক্রি করতে পারবেন তিনি।  

তার মতো নিজের জমিতে তামক চাষ করেছেন মেহের আলী নামে মধ্য বয়সী আরেক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর-এটা মানুষের মুখে মুখে শুনি। তবে কৃষি অফিসের কেউ কখনও তামাক চাষাবাদ করতে আমাদের নিষেধ করেনি।  

‘নদীপাড়ের বালু জমিতে অন্যান্য ফসল তুলনামূলক কম হয়। আবার তামাক চাষাবাদ করলে অগ্রিম কিছু সুযোগ-সুবিধাও মিলে। তাই লাভের আশায় আমরা তামাক চাষই করি। ’

শুধু মেহের আলী কিংবা হুমায়ন মিয়াই নন সরেজমিনে দেখা যায়, বরাইদ গ্রামসহ এর আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের দরিদ্র কৃষকেরা তামাকের চাষাবাদ করেছেন।  

সোহরাব হোসেন নামের এক তামাক চাষি বাংলানিউজকে জানান, তামাক চাষাবাদের জন্য প্রতি শতক জমিতে অগ্রিম বাবদ ১৬০ টাকা, সার, চারা, ত্রিপল এবং পলিথিন সরবারহ করে বিভিন্ন কোম্পানি। এছাড়া জমিতে তামাকের চারা রোপনের শুরু থেকে পাতা বিক্রি করা পর্যন্ত জমি দেখাভালও করেন তারা।  

‘তামাক চাষে লাভ বেশি হয়। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাক চাষে কষ্টও কম, তাই অনেকেই তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ’
 
প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের নানা সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি তামাক কোম্পানির মাঠ ব্যবস্থাপক।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন জানান, তামাক চাষাবাদের জন্য কোম্পানির সুবিধার্থে নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা চাষিদের দেওয়া হয়। তবে কোম্পানি থেকে দেওয়া ওই সব সুযোগ-সুবিধা বা টাকা বিক্রি করা তামাক পাতার মূল্য থেকে সমন্বয় করে কেটে নেওয়া হয়।  

তবে তামাক চাষে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তামাক চাষাবাদ না করার জন্য কৃষি অফিস থেকে সবসময়ই কৃষকদের সচেতন করা হয়। তবে এরপরও অগ্রিম টাকা বা অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।  

তবে মানিকগঞ্জে দিন দিন তামাকের চাষাবাদ কমছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গতবছরের জেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়। এবার তা প্রায় ৪০০ হেক্টর কমেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
কেএসএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।