কৃষকদের দাবি, লক্ষ্যমাত্রা না বাড়ালে খুব অল্পসংখ্যক কৃষকই সরকারের এ উদ্যোগে সুফল পাবেন। আর বাজারেও এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ১২ লাখেরও বেশি কৃষক রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে থাকেন। রবি ২০১৮-১৯ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে মোট বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ১২৬ হেক্টর জমিতে। যেখানে এক লাখ ৪৬ হাজার ৮১১ হেক্টর জমিতেই বোরো ধানের (হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয়) আবাদ হয়েছে।
আবাদ শেষে বিভাগের ছয় জেলার বেশিরভাগ ধানই কর্তন করা হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। যা মোট উৎপাদনের ৯৩ শতাংশেরও বেশি। আর সেই হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। গড় হিসেবে এরই মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে গত বছরের চেয়ে দশমিক তিন ভাগ বেশি উৎপাদন হয়েছে। যদিও পুরো ধান কর্তন হলে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি চলে যাবে উৎপাদনের এ লক্ষ্যমাত্রা।
এদিকে বিভাগের ছয় জেলায় সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ২৬ টাকা দরে মাত্র ৫ হাজার ১৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। যেখানে একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। অন্যদিকে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা দরে বরিশাল বিভাগে মোট যে ১৬ হাজার ৩ শত মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হবে, তাও মিল মালিকদের কাছ থেকেই।
তবে কেজিপ্রতি ২৬ টাকা আর মনপ্রতি এক হাজার ৪০ টাকা দরে সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে আনন্দের কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা এলাকার নারী কৃষক স্নেহলতা বালা।
তিনি বলেন, ধানের এ দরটা না পেলে লোকসান হতো। তবে এখানে উৎপাদনের সকল ধান বিক্রি করতে পারবো না। কারণ কৃষকপ্রতি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কেউ চাইলে বেশিও দিতে পারবে না, আবার কমও দিতে পারবে না।
একই উপজেলার সাহেবেরহাট এলাকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রাপ্ত কৃষক মনি সংকর সরকার বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও প্রচুর ধান উৎপাদন করতে পেরেছি। তবে গত বছর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারেও এমন আশঙ্কা ছিলো। তবে গত বছর কৃষক বাছাইয়ে যেমন সিন্ডিকেট ছিলো, এ বছর সরকারের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় সেই সিন্ডিকেট আর সৃষ্টি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দরিদ্র কৃষকদের কথা মাথায় রেখে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো উচিত। কারণ এতো অল্প লক্ষ্যমাত্রায় কৃষকরা তাদের সব ধান দিতে পারবে না। ফলে তাদের লোকসান হবে। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অল্পের কথা জেনেই চাতাল বা মিল মালিকরাও ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাম বাড়ায়নি। ফলে স্থানীয় বাজারে এখনো ধানের মণপ্রতি দর ৫ শত টাকার মধ্যেই রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে নিজের খাওয়ার জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুক ছাড়া কেউই ধান উৎপাদন করতে চাইবে না।
বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের কৃষক জলিল হাওলাদারের মতে, সরকারের ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাটা আরও বাড়ানো উচিত। তাহলেই চাতাল বা মিল মালিকরা বাইরের বাজার থেকে বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হবে। আর এর মধ্য দিয়েই ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষকরা।
দক্ষিণাঞ্চল ধান উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল হলেও প্রাপ্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম।
তবে সরকারের ধান ক্রয়ের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের বাজারেও প্রভাব পরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান।
তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে যেমন সরাসরি ধান কিনছে, তেমনি মিলারদের কাছ থেকেও ন্যায্যমূলে চাল সংগ্রহ করছে। সরকারের এ উদ্যোগের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমরাও প্রান্তিক কৃষকদের কথা চিন্তা করে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি। সর্বোপরি কৃষকরা যেনো লাভবান হয়, সে লক্ষ্যেই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
এদিকে খাদ্য অধিদফতরের বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোহাম্মদ মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান ক্রয় করছি। পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই ধান ও চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৯
এমএস/এসএ