ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সৈয়দপুরে হাঁস পালনে দিন ফিরেছে দীনেশের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৯
সৈয়দপুরে হাঁস পালনে দিন ফিরেছে দীনেশের দলবেঁধে ছুটতে হাঁস। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: জলাশয়ের হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে হাঁক দিচ্ছিলেন মধ্যবয়সী একজন। কি করেন? প্রশ্নের উত্তর বললো- ‘করি হাঁস চাষ, ডিম বেচি বারো মাস।’

জিগনি জাতের হাঁস চাষ করে বারো মাস ডিম বিক্রি করছেন খামারি দীনেশ চন্দ্র রায় (৫৫)। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়নের চৌমহনী এলাকার ভূমিহীন দীনেশ ১৫ বছর ধরে হাঁস চাষ করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন।

সৈয়দপুর সেনানিবাস এলাকা ঘেঁষে চৌমহনী। ওই এলাকারই বাসিন্দা দীনেশ চন্দ্র রায়। আগে হাটে হাটে কলা বিক্রি করতেন তিনি। পাইকারি কিনে খুচরা বেচে হালিতে ২ থেকে ৫ টাকা লাভ করতেন। তার বড় ছেলে এ কাজে সহযোগিতা করতেন তাকে। কলা বেচে খুব বেশি লাভ হতো না। পচনশীল হওয়ায় মাঝে-মধ্যে লোকসানও গুণতে হয়েছে তাকে। হাঁসের দল, পাশে দীনেশ চন্দ্র রায় সরজমিনে গেলে বাংলানিউজকে এসব কথাই বলেন খামারি দীনেশ। হঠাৎই কলা বিক্রি করা দীনেশের মাথায় এলো অন্য কিছু করা যায় কিনা। তখনি হাঁস চাষের বিষয়টি আসে। এটি ১৫ বছর আগের কথা। শুরু করলেন সনাতন পদ্ধতিতে হাঁস চাষ। হাঁসচাষে দীঘি, নালা ও জলাশয় খুব প্রয়োজন। কিন্ত তিনি তো ভূমিহীন। এগিয়ে এলো প্রতিবেশি। তারই জলাশয় ব্যবহারের অনুমতি পেলেন। পরে অবশ্য আত্বীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নওগাঁ থেকে একদিন বয়সী ২০০ হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করেন তিনি। এসব বাচ্চা লালন-পালনে তিন মাসে ডিম দেওয়া শুরু করে।

দীনেশ বাংলানিউজকে জানান, এসব হাঁস পালনে প্রতিদিন ডিম আসে কমপক্ষে ১৫০টি। একটি হাঁস এক নাগাড়ে তিন বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। পরে ওই হাঁস বিক্রি করা হয় হাটে। ভোজন রসিকদের কাছে হাঁসের মাংস অত্যন্ত প্রিয় খাবার। তাই তা হাটে তুললেই বিক্রি হয়ে যায়।

দীনশের হাঁসগুলো সারাদিন জলাশয়ে সাঁতার কাটে। এসব তদারকি ও পরিচর্যা করেন দীনেশ ও তার স্ত্রী মিনা রানী। হাঁসগুলো দিনে ৭০০ টাকার খাবার খায়। খাবার মেন্যুতে আছে- ঝিনুক গুঁড়া, চাল ও গমের খুদ, ভুট্টা, ধান এবং প্রয়োজনীয় খাবার। বেলাশেষে ওই হাঁসগুলো খামারে তোলা হয়। খামার বলতে দীনেশের বাড়িটাই।

দীনেশ আরও জানায়, দিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার ডিম বিক্রি করেন তিনি। ওই টাকায় চলে তার সংসার। সংসারে আছেন স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে এইচএসসি ফেল করে বেকার। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর বাকি দুই মেয়ে স্কুলছাত্রী। ওদের ভবিষ্যত ভাবনা তাড়া করে দীনেশকে। পানিতে সাঁতার কাটছে হাঁসের দল, ছবি: বাংলানিউজতিনি জানান, সরকার গরিবদের জন্য অনেক কিছু করছেন। আমার মতো গরিবকে কিছু খাস জমি দেওয়া হলে পুকুর খনন করে হাঁসের চাষ করতাম। এতে আমিও উপকৃত হতাম, আর এলাকার মানুষেরও কর্মসংস্থান হতো।

বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রণোবেশ বাগচী বাংলানিউজকে বলেন, আমি দেখেছি দীনেশ হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে হাঁসের খামারটি গড়ে তুলেছেন। তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, দীনেশের হাঁস খামারটি আমি পরিদর্শন করেছি। শূন্য হাতে হাঁসের খামারটি গড়ে তুলে দীনেশ দিন ফিরিয়েছেন। এ ধরনের খামারিকে উৎসাহিত ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৯
এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।