শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে বাজেট ভাবনা নিয়ে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাদশা বলেন, আমাদের কালো টাকা সাদা করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘কিন্তু আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, যে টাকার বাজেট করি সেই পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যায়। আজকে সুইস ব্যাংকে যে টাকা বাড়ছে সেটা কিন্তু দেশের পাচার করা টাকা। ’
তিনি বলেন, যারা কালো টাকার মালিক হন এবং টাকা পাচার করেন তারা কিন্তু পাকিস্তানের ২২ পরিবারের মতো। স্বাধীনতার আগে তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো আর টাকা পাচার করতো করাচিতে। সে কারণে আমরা তাদের এক সময় রাজাকার বলেছিলাম।
‘এখন যারা কালো টাকার মালিক হন এবং দেশের বাইরে পাচার করেন আমি তাদের নব্য রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। ’
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাজেট পাঁচ শতাংশ মানুষের জন্য। পাঁচ শতাংশের জন্য, পাঁচ শতাংশের দ্বারা এবং পাঁচ শতাংশ কর্তৃক আজকে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের বাজেটে ধনী মানুষরা ঘর জামাই, মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা শ্যালক এবং গরিরবা হচ্ছে তাজ্যপূত্র। এই ভাবে যদি বলা যায়, তাহলে বাজেটের প্রকৃত প্রতিফলনটা দেখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ঘরজামাই যারা তারা টাকা চুরি করতে পারে, কিছু হয় না। তারা দুর্নীতি করলে কিছু হয় না। ঋণখেলাপি করলে কিছুই হতে পারবে না। তারা যে জায়গায় আছে সেই জায়গায় কীভাবে রাখা যায়, আর কালো টাকাকে সাদা করার জন্য কত রকমের ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যায় তার পথ আমাদের অর্থমন্ত্রীরা খুঁজে বেড়ান। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমরা উত্তরাঞ্চলে নব্বইয়ের দশকেও খাদ্য রিলিফ দিয়েছি। আজ কৃষকরা উদ্বৃত্ত ফসল ফলাচ্ছেন। কিন্তু নায্যমূল্য নেই। উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনে সরকারের সহযোগিতা ছিল। তারা সার দিয়েছেন। বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। কৃষকরা তা আত্মসাৎ করেননি। প্রতিদান দিয়েছেন। কিন্তু কৃষক যখন দাম পাচ্ছেন না তখন আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাদ্য আমদানির জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। কৃষকরা দুই দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাদশা বলেন, আমাদের দেশে তিন কোটি মানুষ তরুণ। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের কর্মসংস্থান হবে কবে? বাজেটে বলা হয়েছে ২০৩০ সালে। তা করতে হলে প্রতিদিন ১৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করতে হবে। আমি মনে করি, বাস্তবতার দিকে তাকানো দরকার। এতো বিশাল বাজেট নিশ্চয় দেশের একটা অগ্রগতি ঘটাবে। কিন্তু কত মানুষ সুফল পাবে আর কত মানুষ বঞ্চিত হবে তা ভেবে দেখা দরকার। বাজেটকে শুধু আয়-ব্যয়ের নথি হিসেবে দেখলে চলবে না। আজকে বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে সেভাবে আমাদের বাজেটকে দেখা দরকার।
তিনি বলেন, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া রাজশাহীতে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না। সেটা করতে হলে রেল যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সেজন্য পার্লামেন্টে বলেছি, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে আরেকটা ডাবল লাইন একটা রেলসেতু করা হোক। দেড় বছর আগে জাইকার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
রাজশাহীর উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এবার আমরা প্রস্তাব করেছি, রাজশাহীর রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য আমাদের নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। এক সময় বলা হয়েছিল, রেশম কারখানা চালানো সম্ভব না। আমি বলেছিলাম, সম্ভব। এখন গিয়ে দেখতে পারেন রাজশাহী রেশম কারখানায় ৩০টা লুমে উৎপাদন চলছে।
‘এখন রেশমের সঙ্গে ৫ হাজার মানুষকে যুক্ত করতে হবে। তাহলে রেশমের সুদিন ফিরবে। ৫ হাজার পরিবারের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে। রাজশাহীকে রেশম নগরী হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে। তার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। ’
রাজশাহীর শহীদ জামিল আকতার রতন ফাউন্ডেশন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আরিফুল হক কুমার। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মনজুর হাসান চুন্না।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
এসএস/এমএ