চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই টানা ভারী বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। দুই দফা বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বীজতলা টানা প্রায় ১০/১৫ দিন ডুবে থাকে।
জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা ও বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমনের চারার দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। আমন চারা অনেক কৃষকের নাগালের বাইরে রয়েছে। অপরদিকে ধানের বাজার দাম কম থাকায় বেশি বিনিয়োগ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক।
আদিতমারী উপজেলার রজবপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক হিরু বাংলানিউজকে বলেন, ৮ দোন (২৭ শতাংশে এক দোন) জমিতে আমন লাগাতে বীজতলা তৈরি করেন তিনি। চারা গাছ বেশ বড় ও হৃষ্টপুষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে টানা ১০ দিন ডুবে থাকায় সমূলে নষ্ট হয়েছে। এখন আমন ধান লাগানোর মত একটি চারা গাছও নেই। বাজারে কিনতে গেলে ৮ দোন জমির জন্য প্রায় ৯/১০ হাজার টাকা লাগবে। ধানের দাম কম থাকায় চড়া দামে চারা গাছ কিনে রোপণ করে মুনাফা নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
একই উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের পাসাইটারী গ্রামের মানিক মিয়া জানান, বীজতলার আমন চারা গাছ বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। উঁচু অঞ্চল থেকে ২৭ শতাংশ জমির জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে চারা গাছ কিনেছেন তিনি। যার পরিবহন খরচ গুনতে হয়েছে আরো দুইশ’ টাকা। এত খরচ করে ধান চাষে মুনাফা হবে না। তবুও পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে মাত্র ৫৪ শতাংশ জমিতে আমন চাষ করবেন তিনি। যার অর্ধেক জমির চারা এখনো কিনতে পারেননি। চারা গাছ পেলে রোপণ করবেন। না পেলে জমি ফাঁকা ফেলে রাখবেন বলেও জানান তিনি।
হাতীবান্ধা উপজেলার পারুলিয়া এলাকার চাষি মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ১০ দোন জমির জন্য করা আমনের বীজতলা বন্যায় নষ্ট হয়েছে। চারা গাছ কিনে মাত্র দুই দোন জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন, বাকি ৮ দোন জমি তার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বন্যায় পানিবন্দিদের ত্রাণ দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হলেও কেউ সহায়তা করে না। এ জন্য সরকারিভাবে চারা গাছ সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
সদর উপজেলার কালমাটি গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, সরকার বন্যার্তদের ত্রাণ দেয়। ত্রাণ হিসেবে কৃষকদের আমনের চারা গাছ দেওয়া হোক। নতুবা চারা গাছের অভাবে এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি ফাঁকা থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন চাষে ৯০ হাজার ৪শ’ হেক্টর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে ৪৪ হাজার একশ’ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছে। জেলায় ৫ হাজার ৪২ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হলে ২৩১ হেক্টর জমির বীজতলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কৃষি বিভাগের মনগড়া এ তথ্য মানতে নারাজ সাধারণ কৃষকরা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিদু ভুষণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়া কৃষকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। চারা গাছ উঁচু এলাকা থেকে সংগ্রহ করে পাঠালে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯ইং
আরএ