তবে সরবরাহ বাড়লেও তুলনামূলক ইলিশের বাজার চড়া। আবার পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান।
তবে আড়তে নিষেধাজ্ঞার সময় কৌশলে ধরা ইলিশও বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেগুলোর দামও নতুন ইলিশের মতো চড়া। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, কয়েকদিন পর ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়বে, দামও কমবে। সামনের পূর্ণিমার জোয়ারকে কেন্দ্র করে ইলিশের আমদানি বেশি হবে বলে আশা করছেন তারা।
শনিবার (০৩ আগস্ট) ঢাকার সোয়ারিঘাট মাছের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, রূপালি ইলিশে ভরপুর। ভোর থেকে চলছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ইলিশ বিক্রির ধুম। পাইকারি বাজারে নদীর দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশের প্রতিকেজির দাম নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। তবে এই ইলিশ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম আড়তে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের প্রতিকেজির দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের প্রতিকেজির দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের প্রতিকেজির দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের প্রতিকেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, এর নিচেরগুলোর দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পর থেকেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এখনও অনেক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
সোয়ারিঘাটের আড়তদারদের দাবি, সপ্তাহখানেক আগেও যে ইলিশের দাম নাগালের বাইরে ছিলো, এখন তা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নেমেছে। ২০ দিন আগেও বড় আকারের এক পোন নদীর ইলিশ বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। আজ সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর গত বছর এ সময়ে বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। সে হিসেবে দাম কমেছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম একটু বেশি। তবে সাগরের ইলিশের দাম আবার তুলনামূলক কম। যা নদীর ইলিশের অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। ঈদুল আজহার পর ইলিশের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
খুচরা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক দোকান বন্ধ ছিলো। এখন তারা আবার দোকান খুলে বসেছেন। পর্যাপ্ত ইলিশ সরবরাহ থাকালেও দাম কমেনি। খুচরা বাজারে সবচেয়ে ছোট ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ৭০০ টাকা। যেটি পাইকারি বা আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
আড়তদার শ্যামল বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার পর বাজারে এখন মোটামুটি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাছের আকারও মোটামুটি ভালো। তবে নিয়মিত বৃষ্টি হলে আরও বড় ইলিশ ধরা পড়বে।
আড়তদার জাহাঙ্গির বাংলানিউজকে জানান, এবছর মৌসুমের প্রথম থেকেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না মিললেও জেলেরা শূন্য হাতে ফিরছেন না। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। ফলে সরবরাহ বাড়ায় এখন দাম একটু কম। তবে গতবছরের তুলনায় দাম একটু বেশি।
ইলিশ ব্যবসায়ী খোকন বাংলানিউজকে বলনে, নিষেধাজ্ঞার পর মাছ ধরা শুরু হওয়ায় মনে হচ্ছে বেশি মাছ ধরা পড়ছে। ঢাকার আড়তে সে রকম মাছ আসছে না। সাগর ও নদীর ইলিশ একসঙ্গে ধরা পড়ছে তাই আমদানি কিছুটা বেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমবে। তবে তা ঈদের আগে নয়।
মো. আব্দুল্লাহ নামের এক ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে বাজারে প্রচুর পরিমাণে সাগরের ইলিশ আসছে। আগের চেয়ে কিছুটা কম দামে ইলিশ মিললেও তা সরবরাহ অনুযায়ী কমেনি।
মনপুরা ১ নং তালতলা আড়তদার ইউসুফ মিয়ার তিন পোন ইলিশ নিয়ে এসেছেন জামাল উদ্দিন। সোয়ারিঘাটে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় কেজি ওজনের তিন পোন ইলিশ ৬০ হাজার টাকা দরে এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, গত সাতদিন ধরে ইলিশ মাছের আমদানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন নৌকা-ট্রলারে করে ঘাটে মাছ আসছে। তবে দাম একটু বাড়তি। আড়তে ইলিশের সংখ্যা কম। কিন্তু চাহিদা আছে। তাই দাম বেশি। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়াকে তিনি মাছ না পাওয়ার কারণ হিসাবে জানান। তবে ঈদের পর পূর্ণিমা থেকে মাছ বেশি পাওয়া যাবে। তখন দাম আরো কমে যাবে।
সাগর বা চট্টগ্রামের ইলিশের আড়তদার বিমল বর্মণ বাংলানিউজকে বলনে, সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম এ বছর একটু বেশি। এখন পর্যন্ত ছোট আকারের ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ও মাঝারি আকারের ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর বড় সাগরের ইলিশ বাজারে এখনও আসেনি।
তিনি জানান, সাগরের সবচেয়ে ছোট আকারের প্রতিকেজি ইলিশের দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। এর থেকে একটু বড় ইলিশের দাম ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, আর ৪০০-৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ৫০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে ৮শ’-৯শ’ টাকায়। তবে সেটি একেবারেই কম। এক সপ্তাহ পর বাজারে ইলিশের আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি দামও কমবে।
অন্যদিকে মৎস্যসম্পদ বিভাগ বলছে, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করছে ইলিশের গতিপথ। যেহেতু বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ইলিশের আমদানিও বাড়ছে। পুরো মৌসুমজুড়ে এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা মৎস্য বিভাগের।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস