সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু ও বন্যার কারণে এবার দেশে কোরবানিতে প্রভাব পড়তে পারে। ফলে কোরবানির ঈদে এবারও লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।
মানিকগঞ্জ সিংগাইরের ইয়াকুব আলী মেম্বার। প্রধান পেশা গরুর ব্যবসা। গত কোরবানির ঈদে গাবতলী পশুর হাটে ৩০টা গরু নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ১৬টা, যার সবগুলোই বড় সাইজের। তার ভাষ্য, গরু বিক্রি হলেও লাভ হয়নি। ১৪টা গরুই অবিক্রিত রয়ে যায়।
‘সব মিলিয়ে ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়। ভেবেছিলাম এবার পুষিয়ে নেবো। কিন্তু ডেঙ্গু ও বন্যায় এবারও লোকসানের আশঙ্কা করছি। ’
আসন্ন কোরবানির হাট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মানুষ বন্যায় ঘর ছাড়া কোরবানি দেবে কীভাবে। ডেঙ্গু মানুষ মেরে ছাপা করে দিছে। বন্যা ও ডেঙ্গুতে দেশের মানুষের মনে শান্তি নেই। কোরবানি যেমন সওয়াবের, তেমনই আনন্দের। কিন্তু মনেই শান্তি না থাকলে দ্যাশে সমস্যা হলে কোরবানি কোম হবি ইডায় (কম হবে এটাই) স্বাভাবিক। দুই বারের ঘা (লোকসান) শুকায়নি এবারও ঘায়ের উপরে ঘা হবে দেখতাছি। ’
ঢাকার একমাত্র পশুর স্থায়ী বাজার গাবতলী পশুর হাট। বেপারীরা কৃষক ও খামারিদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করেছেন। এসব গরু কোরবানিতে গাবতলী হাটে বিক্রি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এর মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের নূর ইসলাম বেপারীও। গত কোরবানির ঈদে হাটে ৩৫টি মাঝারি আকারের গরু তুলেছিলেন তিনি। এর মধ্যে অবিক্রিত ছিল ১৩টি। বছরের অন্য সময় আর বিক্রি করেননি।
তিনি জানান, গতবার তার সব মিলিয়ে ৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। নূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত তিনবার বশান খাইছি (লোকসান)। বাজার দম ধরে আছে কী হয়, আল্লাহ জানে। ’
বাংলাদেশে ১২ আগস্ট কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। গাবতলী পশুর হাট জমতে শুরু করবে ৯ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি গরু হাটে এলে লোকসানের পাল্লা বেশি ভারি হবে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার মজনু বেপারী বলেন, ‘দ্যাশে যা গরু আচে দুই কোরবানিতে ফুরাবে না। এর মইদ্দে বিদেশি গরু আইলে আমাদের মরা ছাড়া গতি নাই। গেল কোরবানির ঈদে ২২ গরুতি ৬ লাখ ধরা (লোকসান)। গরুর দাম কমলে খেইতেলরা (কৃষক) আগ্রহ হারাবে। সরকারের কাছে আবেদন, বাইরে থেকে গরু যেন না আসে। ডেঙ্গু বন্যায় বাইরে থেকে গরু আসলে আমরা পুরা শ্যাষ। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। কোরবানির জন্য মোট এককোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩ টি গরু, ছাগল ও মহিষের যোগান রয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭২ লাখ।
এদিকে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সব বিষয় মাথায় রেখেই গাবতলী হাটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন চলছে হাটের গেট ও হাসিল ঘর নির্মাণের কাজ। বাঁশ ও সামিয়ানা টানিয়ে গরু রাখার সম্প্রসারিত স্থান তৈরিতেও করছে হাটের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
গাবতলী পশুর হাটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা ও ডেঙ্গুর প্রভাব পড়বে গরু বেচাকেনায়। এই বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি চলছে। হাটে গরু কম উঠলে বাড়তি জায়গা করে লাভ নাই। আশা করছি ঈদের তিন-চার দিন আগে থেকে হাট জমবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৯
এমআইএস/এমএ