ট্যানারি মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত ওই বৈঠকে চামড়া খাতের শিল্পের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাজার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও কমে গেছে। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। কোরবানির চামড়া বেচার টাকা কেউ পকেটে করে নিয়ে যায় না। এটা বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় দেওয়া হয়। আমরা চাইছি চামড়ার দাম বাড়ুক। তবে আমাদের মান বাড়াতে হবে। তাই সব কিছু বিবেচনায় গতবারের দামই নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কেনা হয়। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ২০১৮ সালেও একই দামে চামড়া কেনা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সংস্থা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন অবশ্য গতবারের চেয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ায় ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তবে তা আমলে নেওয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, সরকার চামড়া রপ্তানি ও এই খাতে দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি স্থানান্তরের ফলে বর্জ্য শোধনাগার এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি। তবে প্রয়োজনে সরকার আরো একটি সিইপিটি নির্মাণ করে দেবে। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা গতবারের দামই নির্ধারণ করেছি।
তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি বাড়াতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার বাজার বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, অস্বাভাবিক গরম পড়ায় এবার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঠিকভাবে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ না করলে ভালো মানের ১৫ শতাংশ চামড়াও পাওয়া যাবে না।
‘গতবছরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। তাই এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া গত বছরের ৬০ শতাংশ চামড়া এখনও অবিক্রিত রয়েছে। এ কারণে এবার দাম কমানোর বিকল্প নেই। ’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, দ্রুত কারখানা স্থানান্তর করে আমরা এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি। সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে এখনও সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (সিইটিপি) সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। তবে এবছর আমাদের পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে। ফলে চামড়া সংরক্ষণে সমস্যা হবে না। তবে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণের জন্য প্রচারণা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকরা সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রেখেছেন। অন্যান্য ঈদের সময় ১০ থেকে ২০ শতাংশ নগদ টাকা দিলেও এবার সেখানেও টানাটানি চলছে। ফলে এ খাত দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। এজন্য একটি সুনিদিষ্ট নীতিমালাসহ ট্যানারি মালিকদের জমি দ্রুত রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় ২০১৪ সালে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ২০১৫ সালে ৫০ টাকা, ২০১৬ সালে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ২০১৭ সালে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ২০১৮ সালে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় প্রতি বর্গফুট পশুর চামড়া কেনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা , আগস্ট ০৬, ২০১৯/আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা
জিসিজি/এমএ