তাই অন্তত কোরবানির ঈদে যে যার মতো সাধ্যানুযায়ী মসলা কেনার চেষ্টা করেন এবং কিনেও থাকেন। তবে মসলা কেনার পর্বটা ঈদের দু’একদিন আগে সেরে নিতে চান বেশির ভাগ মানুষ।
এটাতো হলো প্রত্যেক বছরের ধারাবাহিক একটা নিয়মমাত্র। তবে আগে ও পরে যাই হোক না কেন, কোরবানির ঈদের বাজার তালিকায় কিন্তু মসলার নামটা থাকেই। এমনকি থাকতে বাধ্য বললেও বেশি বলা হবে না। আর এটাকে প্রত্যেক ঈদুল আজহায় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান মসলা বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীরা। বাড়িয়ে দেন মসলার দাম।
এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এরইমধ্যে গরম মসলার বাজার বেজায় গরম হয়ে উঠেছে। রকমভেদে প্রত্যেক মসলার দাম কম বেশি বেড়েছে। কিছু কিছু মসলার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যা অনেকটা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
বাড়তি দামের কারণে চাহিদার তুলনায় কম মসলা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক ক্রেতা। তাদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ এলেই ইচ্ছে মতো মসলার দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ কেন্দ্রিক কোনো মসলার দাম বাড়েনি। যা বাড়ার তা বেশ আগেই বেড়েছে। ঈদ সামনে রেখে কোনো মসলার দাম বাড়ানো হয়নি, দাবি তাদের।
বগুড়া শহরের রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতা এবং বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে রকমারি আইটেমের মসলা। আইটেমভেদে অনেক মসলা বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। আবার অনেক মসলা ভিন্ন পাত্রে রাখা। দোকানগুলো অত্যন্ত পরিপাটিভাবে সাজানো। মূলত ঈদুল আজহা কেন্দ্রিক ক্রেতা সাধারণের দৃষ্টি কাড়তে এতসব আয়োজন। কিন্তু মসলার বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাদের একাধিক দোকানে চক্কর খেতে দেখা যায়। তবে সব দোকানের চিত্র একইরকম। বিক্রেতারা যেন একাট্টা হয়ে মসলার দাম বেঁধে মসলা বিক্রি করছেন।
বিক্রেতা আমির মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, এ বাজারে সাদা এলাচ, কালো এলাচ, দারুচিনি, জিরা, ধনিয়া, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জয়ফল, জয়ত্রী, কিসমিস, চিনা বাদাম, তেজপাতা, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, হলুদ ও মরিচের গুড়াসহ সবধরনের মসলা পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, প্রত্যেক বছরই কোরবানির ঈদের সময় এসব মসলার দাম একটু বেড়ে যায়। তেমনি এবারও বেড়েছে। তবে বিক্রেতারা কোনো মসলার দাম বাড়ায়নি, দাবি বিক্রেতা আমির মণ্ডলের।
সুমির কুমার নামে আরেক বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, মসলার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায় তাদের বাড়তি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে। কিন্তু লাভ আগের মতোই রয়েছে। মাঝখানে ক্রেতারা তার মতো অনেক বিক্রেতাকে ভুল বুঝছেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাদা এলাচের। প্রতিকেজিতে বেড়েছে আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত। এককেজি সাদা এলাচ ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া দারুচিনি প্রতিকেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, লবঙ্গ ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা, জিরা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, চিনা বাদাম ৯০ থেকে ১১০ টাকা, জয়ত্রী ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, কিসমিস ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রকমভেদে অন্যান্য মসলার দাম কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ক্রেতা শরীফ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, একটি করে দিন যাবে আর মসলার দাম বাড়বে। তবে ঈদ গেলেই মসলার দাম কমে আসবে। কিন্তু তাকে তো ঈদের আগেই কিনতে হবে। তাই বাড়তি দামের কারণে চাহিদার তুলনায় কম করে যতটুকু পারা যায় ততটুকু মসলা কিনেছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, রকমারি মসলা অনেকটা কোরবানির ঈদের অনুসঙ্গ। মাংসে স্বাদ বাড়াতে মসলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু মসলার বাজারে যাওয়ার পরই যেন শরীর গরম হয়ে ওঠে। ঈদের কারণে গরম মসলার তেজ ইচ্ছে মতো বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। তাই সাধ্যের মধ্যে থেকে যতটুকু পেরেছেন মসলা কিনেছেন এ ক্রেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/