শুক্রবার সকাল থেকে কোরবানির পশুতে ভরে উঠেছে রাজশাহীসহ উত্তরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট ‘সিটিহাট’। দুপুরের পর ঢল নেমেছে ক্রেতাদেরও।
ইট-পাথরের শহরে জায়গার অভাবে যারা এতদিন সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। তারাই এখন হাটের শেষ মুহূর্তের ক্রেতা। মূলত শেষের এই তিনদিনের বিকিকিনির দিকেই তাকিয়ে থাকেন রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিক্রেতারাও৷
ফলে কোরবানির পশু কেনা-বেচায় আজ রাজ্যের ব্যস্ততা ভর করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাথায়। কারোরই যেনো ফুরসত নেই। শেষ মুহূর্তের কেনা-বেচাকে ঘিরে রাজশাহীর সিটি হাটে এখন পশুর আমদানি ও ক্রেতা দুইই বেড়েছে। শহরের কাছে হওয়ায় এ হাটেই ক্রেতারা ছুঁটছেন। তাই শুক্রবার দুপুর থেকে কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে পশু হাট। গরু আর খাসির আমদানিও হয়েছে প্রচুর।
আর পিছিয়ে নেই মহানগরের উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালির মাসকাটা দীঘি, জেলার গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি ও কাঁকনহাট, তানোরের চৌবাড়িয়া হাট, পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার দেশি গরু ও ছাগলের চাহিদা এবং দাম বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে সকালে দাম ধরে রাখলেও দুপুরের পর থেকে কমাতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। দাম ধরে না রেখে বিক্রেতারা নিজের পশুটি অল্প লাভেই এখন ছেড়ে দিচ্ছেন। আর কোরবানির পশু কেনার শেষ সময় বলে ক্রেতারও সেই সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। এতেই রাজশাহীর বৃহত্তম কোরবানির পশুর হাট ‘সিটি হাট’ জমে উঠেছে।
হাটের পূর্ব থেকে পশ্চিম, ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর-দামে হাটের প্রতিটি প্রান্তই প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। ক্রেতারা চেষ্টা করছেন কিভাবে আরও কম দামে গরু-খাসি পাওয়া যায়, বিক্রেতাদের চেষ্টা দাম কম হলেও তা বিক্রি করে কিভাবে বাড়ি ফেরা যায়।
এদিকে, যানজটে পথে দীর্ঘসময় ব্যয় হওয়ায় হাটগুলোতে বাইরের ক্রেতাদের ভিড় কম। আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে স্থানীয় ক্রেতা। এবার ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দেশি ছোট এবং মাঝারি আকৃতির গরু।
ক্ষতিকর বিভিন্ন দিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে মোটাতাজাকরণ গরুর দিক থেকে এবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সবাই। তাই দেশি গরুর কদর বেশি। এবার রাজশাহীর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর সরবরাহ হয়নি বললেই চলে।
ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত তিনদিন থেকে হাট জমে উঠলেও আজই লোক বেশি এবং অন্যান্য দিনের তুলানায় দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সকাল ১০টা থেকেই মহানগর ও এর আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে হাটে আসা শুরু করেছে গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া। বিকেল ৩টা বাজতেই জমে উঠে হাট। সূর্য পশ্চিমে হেলতেই চলমান তাপ প্রবাহ কিছুটা কমতে পর থেকে হাটে কেনা-বেচা চলছেই। বিকেলে মুখরিত হয়ে ওঠে হাট ও তার আশেপাশের এলাকা। সন্ধ্যা গড়িয়ে বেচা-কেনা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। এছাড়া শনিবার (১০ আগস্ট) এবং রোববার (১১ আগস্ট) সারারাতই খোলা থাকবে রাজশাহী সিটি হাট।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হারুপুর থেকে ৬টি গরু নিয়ে এসেছেন আফাজ উদ্দিন। তার সবচেয়ে বড় গরুটির দাম ৯০ হাজার টাকা। আর সবচেয়ে ছোট গরুটির দাম ৪৫ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের বাকি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সকাল থেকে দু’টি মাঝারি গরু বিক্রি করেছেন। হাটে বড় গরুর চেয়ে ছোট এবং মাঝারি আকারের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, বাড়িতেই গরুর খামার। সারা বছর গরু পালনের পর হাটে নিয়ে এসেছি। কিন্তু যতটা বাড়তি লাভ আসা করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ততটা হচ্ছে না। এ সপ্তাহে হাটে কিছু ভারতীয় গরুর আমদানি হয়েছে। তবে হাটে এখনও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালন-পালন করা দেশি গরুর চাহিদা বেশি। এজন্য বাড়তি লাভ না হলেও রাজশাহীর স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
গোদাগাড়ীর প্রেমতলি গ্রামের গরু বিক্রেতা জয়নাল হোসেন জানান, আকার ভেদে ছোট আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের গরুর দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মোটামুটি বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সব আকারের গরুর দামই ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে আজ।
সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, এবার ভারতীয় গরু কম। তাই দেশি গরুর চাহিদা বেশি। তবে প্রথম দিকে হাটে দেশি গরুর আমদানি কম থাকায় দাম বেশি ছিল। ৩/৪ দিন থেকে আমদানি বাড়ায় দামও কমতে শুরু করেছে। বিক্রেতারা প্রথম দিকে চড়া দাম হাঁকালেও আজ একটু কমিয়েছেন।
অনেকে সামান্য লাভ থাকলেও গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ক্রেতারা দর করে সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই পছন্দের পশুটি কিনে নিয়ে যেতে পারছেন। আর হাটে জাল টাকা সনাক্তে মেশিন বসানো হয়েছে। হাসিল নিয়েও কোনো সমস্যা হয়নি। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একজন পশু চিকিৎসক রয়েছেন। সব মিলিয়ে শুক্রবারই প্রথম পশুর হাট জমে উঠেছে বলেও জানান এ হাট ইজারাদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/