বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) লালবাগ পোস্তার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এ দাবি জানান।
তারা জানান, ফিনিশড লেদার বা প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানির পাশাপাশি ব্লু-লেদার (রাসায়নিক দিয়ে চামড়াকে পশম ও ঝিল্লিমুক্ত করা) রপ্তানি ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ব্যাপারে মাদার হাই অ্যান্ড স্কিন-এর হাজি ইলিয়াস বাংলানিউজকে বলেন, ব্লু-চামড়া রপ্তানির কোনো বিকল্প নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি তারা ব্লু -চামড়া রপ্তানি করতে ট্যানারি মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি দিক এতে চামড়ার ব্যবসায় সুদিন ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সালের আগে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপে প্রচুর ব্লু -চামড়া রপ্তানি হতো। তখন অসংখ্য ইউরোপিয়ান বায়ার আমাদের দেশে আসতো চামড়া নিতে। কিন্তু ৯০ সালে এরশাদ সরকার চামড়া রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বিদেশি বায়রা আমাদের দেশে আসছেন না।
সে সময় তারা ব্লু -চামড়া কম দামে নিতে পারতো এবং আর্টিকেলটা তাদের মতো করে তৈরি করতে পারতো এজন্য ব্লু -চামড়া চাহিদাটা ব্যাপক ছিল বলে তিনি জানান।
এবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকার সমস্যার কারণে এমনটি হয়েছে। গত পাঁচ বছর ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা দিচ্ছে না। কাগজে-কলমে পাওনা আছে। অথচ ২০১৫ সালের পর থেকে তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা পাইনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চামড়া যতটুকু পচেছে আরও পচা দরকার ছিল। তাহলে ট্যানারি মালিকদের টনক নড়তো। তারা আমাদের পাওনা না দিয়ে কোরবানির দিন রক্তমাখা চামড়া কিনেছেন।
ইলিয়াস বলেন, চামড়ার দাম কোনো বিষয় না। টাকা না থাকলে দাম দিয়ে কী হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব ব্যাপারীরা আমাদের চামড়া দেন টাকার অভাবে তারাও কোনো মাল দিতে পারেননি। যেসব ব্যাপারী প্রতি ঈদে ১০ থেকে ১২ হাজার চামড়া দিতো তারা এবছর ৫শ থেকে এক হাজার চামড়া কিনেছে। টাকার অভাবে চামড়া কিনতে পারেননি। তাই চামড়া রপ্তানির সুযোগ থাকলে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা থাকতো, তারা প্রচুর চামড়া কিনতে পারতো।
ব্লু -চামড়া রপ্তানি শুরু হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ হয়ে যাবে। চাইলেও তারা চামড়া নিয়ে কারসাজি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আনোয়ার অ্যান্ড সন্সের মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই শিল্প রক্ষার্থে এখনই ব্লু -চামড়া রপ্তানির করা প্রয়োজন। তাহলেই আজকের যে অবস্থা সেটি আগামীতে আর হবে না। প্রচুর বায়ার আসবে তখন ট্যানারি মালিকরা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টাকা নিয়ে এরকম ঘোরাতে পারবেন না।
তবে আড়তদারদের বকেয়া না পাওয়ায় তারা এবং ব্যাপারীরা চামড়া কিনতে পারেননি বলেও তিনি জানান।
এদিকে কুমিল্লা থেকে চামড়া এনে লালবাগ পোস্তায় দেন ব্যাপারী আমির হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চামড়ার দাম এতটাই কম ছিল তারপরও আমরা চামড়া কিনতে পারিনি টাকার অভাবে। গত পাঁচ বছর ধরে প্রচুর বাকি পড়ে গেছে আমাদের। বকেয়াগুলো পেলে এই ধ্বংস নামতো না।
তিনি বলেন, পাঁচ-সাত বছর আগেও চামড়ার বাজার অত্যন্ত ভালো ছিল। সারাবছর যা বাকি হতো মালিকরা ঈদের আগে আমাদের বকেয়া পরিশোধ করে দিতেন। আমরা চামড়া প্রচুর কিনতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এটি হচ্ছে না। টাকার অভাবেই আমরা চামড়া কিনতে পারছি না।
তিনি আরও জানান, ৯০ দশকে চামড়ার সুদিন ছিল। তখন ব্লু-চামড়া রপ্তানি হতো। ট্যানারি মালিকরা আমাদের নগদে দাম পরিশোধ করতেন এবং প্রচুর বায়ার আসতো। ব্যবসা করে সেই সময়টা মজা পেতাম। সরকার যদি ব্লু- চামড়া রপ্তানির সুযোগ করে দেয় আবারো এই ব্যবসায় সুদিন ফিরে আসবে।
তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নব্বইয়ের আগে ব্লু -চামড়া রপ্তানি হতো। কিন্তু ৯০ সালে এরশাদ সরকার এটি বন্ধ করে দেয়। সেই সময় আমাদের ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির শিকার হন। তখন আমাদের মেশিন ছিল না এরপর ব্যবসায়ীরা মেশিন এনেছেন এখন চামড়া আধুনিকভাবে হচ্ছে। তাই ব্লু -চামড়া বিষয় না, আমাদের পাওনা পরিশোধ করলেই আমরা প্রচুর চামড়া কিনতে পারবো। এতে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তা কেটে যাবে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্লু -লেদার রপ্তানি সুযোগ দেওয়া হলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাবেন। ট্যানারি মালিক সিন্ডিকেটে কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধ হবে। এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এসএমএকে/এএ