আর্জেন্টিনায় সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দেশটির উৎপাদন ও শ্রমমন্ত্রী ডান্টে সিকার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব কথা বলেন। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বে সুনামের সঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে। আর্জেন্টিনার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। উচ্চ আমদানি শুল্ক হারের কারণে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত ও বিশ্বমানের তৈরি পোশাক স্বল্পমূল্যে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আর্জেন্টিনায় রপ্তানি করতে তৈরি পোশাক আমদানির উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক হ্রাস করা একান্ত প্রয়োজন।
আর্জেন্টিনার উৎপাদন ও শ্রমমন্ত্রী ডান্টে সিকার বলেন, আগামী মাসে তৈরি পোশাকের উপর শুল্ক হ্রাস বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সভা হবে। এ সময় উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার খাত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসারে (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত) বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও উক্ত জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের আলোচনাকে বেগবান করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আর্জেন্টিনা সফরে রয়েছে। প্রতিনিধি দলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার কৃষি, প্রাণী ও মৎস্যপালন বিষয়ক মন্ত্রী লুইস এৎসেভেহারের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে দু’দেশের বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ় হবে। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য যেমন- ভোজ্যতেল, শস্য, তৈল বীজ প্রভৃতি আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পণ্য আমদানির জন্য আর্জেন্টিনার মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। আর্জেন্টিনা কৃষি, পশুপালন, মৎস্যপালন, ক্রীড়া প্রভৃতি খাতে কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে।
এরপর আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোরাসিও রেইসারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে মার্কোসারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য প্রস্তাব দেয়। এফটিএ স্বাক্ষর উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হবে। আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি মার্কোসারের আগামী শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়ে আশ্বাস দেন। এছাড়া শিগগিরই ঢাকায় কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ে আর্জেন্টিনা একটি আঞ্চলিক সেমিনার আয়োজন করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার চেম্বার ফর ট্রেড অ্যান্ড সার্ভিসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ থেকে অধিক পরিমাণে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাট, জুতা, প্লাস্টিক সামগ্রী আমদানির জন্য চেম্বারের সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করছে, এখানে বিনিয়োগ করার জন্য তিনি চেম্বারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস