জুয়েলারি মালিক সমিতি বলছে, আর্ন্তজাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে দশ বারে স্বর্ণের মোট দাম বাড়ানো হয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ টাকা।
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৪৭ হাজার ৪৭২ টাকা ৪৮ পয়সা। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট সেই একই মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৮ হাজার ২৮ টাকা।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে তাই আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৫০ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক একুশ হাজার টাকার মত। আমরা এই একুশ হাজার টাকা একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত এক মাসে বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৫০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম এখনো কম। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে জালিয়াতির কারণে অলংকার তৈরির এই ধাতুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, শেয়ারবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী এখন স্বর্ণকেই নিরাপদ মনে করছেন। তাই বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের নজর এখন স্বর্ণ মজুদে। যেখানে শেয়ারবাজারের তুলনায় পুঁজি হারানোর ভয় অনেক কম। শেয়ারবাজার ছেড়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ এর দাম বাড়াতে অনেকটাই ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরেই স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে নয় বার। এতে দেখা গেছে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম সবশেষ ২৭ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮ হাজার ২৮ টাকা। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ছিল ৪৭ হাজার ৪৭২ টাকা ৪৮ পয়সা। ১ হাজার ৫১৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি দাম হয় ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা ৮০ পয়সা। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বাড়ে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। তাতে ২৯ জানুয়ারি দাম হয় ৫০ হাজার ১৫৫ টাকা ২০ পয়সা। ১৪ জুন হয় ৫১ হাজার ৩২১ টাকা ৬০ পয়সা। ১৮ জুলাই হয় ৫০ হাজার ১৫৫ টাকা ২০ পয়সা। ৭ জুলাই হয় ৫২ হাজার ১৯৬ টাকা ৪০ পয়সা। ৬ হয় আগস্ট ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা ২০ পয়সা। ৮ আগস্ট হয় ৫৫ হাজার ৬৯৫ টাকা ৬০ পয়সা। ১৯ আগস্ট হয় ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা।
একই সময়ে ২১ ক্যারেট, ১৮ ক্যারেট ও সনাতন পদ্ধতিতেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
স্বর্ণ বেচাকেনার তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, সবশেষ ২৩ আগস্ট বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৫২৭ দশমিক ৫ ডলার। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৮৩ ডলার।
আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে দাম বাড়াতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপরে চীন স্বর্ণের মজুদ বাড়িয়ে দিলে ডলারে দরপতন হয়। যার প্রভাব পড়েছে স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে। তিনি আরও বলেন, খুব সহসাই কমবে না স্বর্ণের দাম।
নির্ধারিত কর দিয়ে চলতি বছরের জুন ২৪ থেকে ২৬ জুন দেশের জুয়েলারি মালিক ও অন্যদের কাছে থাকা অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করার জন্য তিনদিন সময় দেয়। এসময় স্বর্ণ মালিকরা ১৭৫ কোটি টাকা কর দিয়ে অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করেন।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি জুয়েলার্স রয়েছে। প্রতি বছর এসব জুয়েলার্সে ১৮ থেকে ৩৬ মেট্রিক টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে ক্রেতা পর্যায়ে। পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারের টিএস গোল্ড হাউজের মালিক সুজিত ধর বলেন, বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকায় আমাদের কাস্টমার কমে গেছে। আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ অর্ডার পেতাম এখন তার অর্ধেকও পাচ্ছি না। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে কাস্টমারের অভাবে এক সময় আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এসই/জেডএস